কল্লোল মুখার্জী
ঐতিহাসিক দিক থেকে যতই অস্পষ্টতা থাকুক বা আধ্যাত্মিক তত্ত্ব যতই দুরূহ হোক, আজও মানুষ পীঠ উৎপত্তির ক্ষেত্রে দক্ষযজ্ঞের কাহিনিকেই বিশ্বাস করে। আর সেই বিশ্বাসেই প্রণত হয় পীঠস্থানগুলিতে। ‘সতীপীঠ’ সৃষ্টির যে পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত আছে তা প্রায় সকলেরই জানা, তাই অহেতুক সেই গল্প না লিখে অন্য বিষয়ে আসি। দেবীর পীঠ যে দেবীর দেহাংশ পতনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল, তা প্রথম জানা যায় ‘আইন-ই-আকবরী’ থেকে। পরবর্তীকালের সাহিত্যেও এই তথ্যকেই স্বীকার করা হয়েছে।
ভারতে দক্ষযজ্ঞের কাহিনি যেভাবে একান্নপীঠ গড়ে তুলেছিল, সেরকমই একটি গল্প পাওয়া যায় মিশরীয় পুরাণেও। মিশরের অন্যতম প্রধান একজন দেবতা হলেন ‘ওসিরিজ’। মহাদেবের মতোই তিনিও বাঘছাল পরিহিত, দণ্ডধারী। তাঁর মাথায় রয়েছে সাপ, এপিস নামক এক ষাঁড় তাঁর বাহন। ওসিরিজের বিবাহ হয় আইসিসের সঙ্গে। সুখেই দাম্পত্য কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের এই সুখ সহ্য হয়নি ওসিরিজের ভাই সেটের। ওসিরিজকে হত্যা করে তাঁর কফিনবন্দী নীলনদের জলে ভাসিয়ে দেন সেট। স্বামীর মৃত্যুতে পাগলপ্রায় হয়ে যান দেবী আইসিস। উন্মত্তের মতো যত্রতত্র খুঁজতে থাকেন নিজের স্ববামীকে। অবশেষে নীলনদের তীরে খুঁজে পান ওসিরিজের মৃতদেহ। কিন্তু তাঁর থেকে সেই দেহ ছিনিয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে মিশরের নানা স্থানে ছড়িয়ে দেন সেট। যেখানে যেখানে ওসিরিজের দেহাংশ পরেছিল পরবর্তীকালে সেই সেই স্থানে গড়ে ওঠে এক একটি তীর্থক্ষেত্রের।

মিশরের এই লোককথা ও আমাদের দক্ষযজ্ঞের গল্প প্রায় অভিন্ন। এখন প্রশ্ন হল এই কাহিনির জন্ম ভারতে না মিশরে? আমরা জানি প্রাচীন ভারত বাণিজ্যে উন্নত ছিল। তাই হয়ত বণিকদের নৌকায় চড়ে আমাদের দক্ষযজ্ঞের মিশরে পাড়ি দিয়েছিল অথবা মিশর থেকে ওসিরিজের কাহিনি এসে পরেছিল আমাদের গল্পকথার আঙিনায়। আর এভাবেই এক হয়ে গিয়েছিল দুই দেশের সংস্কৃতি।
তথ্য সূত্রঃ একান্ন পীঠ, পূর্বা সেনগুপ্তা
ছবি ঋণঃ পিক্সাবে