রিভিউ – ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়|

গল্পের শুরুটা হল শেষ থেকেই। ২২শে শ্রাবণের রেশ টেনেই স্পিন অফ দ্বিতীয় পুরুষের সূচনা করেছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। তবে স্পিন অফ হলেও ৯ বছর আগের ছবির নস্টালজিয়া রয়েছে এই ছবিতে। কোনও একটা অঙ্ক কষতে গিয়েই প্রায় পঁচিশ বছর আগের কায়দাতেই শহরে একের পর এক খুন করতে  থাকে খোকা (অনির্বাণ ভট্টাচার্য)। শুধু তাই নয়, খুনীর কপালে ক্ষুর দিয়ে করে দেয় অটোগ্রাফ। আর সেই পুরনো সূত্র ধরেই এই কেসের জট খোলার ভার দেওয়া হয় কলকাতা পুলিশের দুঁদে অফিসার অভিজিত পাকড়াশি (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)-কে। আগের থেকে এখন অনেকটাই শান্ত স্ত্রী অমৃতার (রাইমা সেন) ডালভাত। আর এর মতোই তাদের দাম্পত্য জীবনের পানসেভাব কাটাতে অমৃতা তার স্বামীকে কাউন্সেলিং-এর জন্য নিয়ে যেতে চায়। সেই নিয়েই দুজনের মধ্যে চলতে থাকে বিস্তর টানাপোড়েন।

তবে এরই মাঝে রহস্যময় ওই খুনের কিনারা করার জন্য তাঁকে সহযোগীতা করতে আসেন পুলিশ অফিসার রজত (গৌরব চক্রবর্তী)। পর পর একই ধাঁচে খুন হওয়া মানেই তা ‘সিরিয়াল কিলিং’ নয়, প্রত্যেক সিরিয়াল কিলিং-এর নেপথ্যে যে একটা মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি কাজ করে তাও দর্শক এবং সহকারীকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন অভিজিত। অন্যদিকে অভিজিত অমৃতার জীবনে ফের একবার বিরিয়ানির মতো হাজির হন সূর্য সিংহ (আবীর চট্টোপাধ্যায়) একেবারে খানিকটা গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সের মতোই। সহযোগী জুনিয়ার পুলিশ অফিসার রজতের উপস্থিতি যথাযথ, তবে গৌরব-ঋদ্ধিমার স্ক্রিন প্রেজেন্স খানিকটা মেদযুক্ত বলেই মনে হল।

তবে প্রবীর রায়চৌধুরির ‘জিয়া-নস্টাল’ ফিরিয়ে আনতে তাঁর দাদার চরিত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিনয় ভালই। তবে খোকার ছোটবেলার ভূমিকায় ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় বাড়তি নজর কেড়েছেন। ছবির জন্য নিজেকে অনেকটাই ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অনির্বান ভট্টাচার্যও। খুনির কর্তে মুখ ভেজানোর পরেও স্বাভাবিক অবস্থায় পর্দায় তাঁকে দেখলেও যেন ঘেন্নায় গলার ভিতরে দলা পাকিয়ে যায় কিছু একটা- মনে হয় এমন একটি চরিত্র সত্যিই অনির্বাণ ছাড়া কেউ করতে পারতেন না। যদিও ছবি মুক্তির আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে খোকা, যার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সৃজিতোচিত থ্রিলারের বীজ।

সৃজিত তাঁর প্রথম ছবির মতোই এই ছবিতেও ক্লাইম্যাক্সকে পুরোপুরিভাবেই আড়াল করে রেখেছেন। তবে ক্লাইম্যাক্সের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে দর্শক হিসাবে আপনার মনে যদি যুক্তি-তর্ক দানা বাধে তাহলেই বিপদ। তাহলেই মনে হতে পারে চিত্রনাট্যে একটা বড়সড় ফাটল থেকে গিয়েছে, যাতে নড়ে যেতে পারে এই ভীতও। সাধারণত বাংলা থ্রিলার ছবিতে যেমন একটা আধো আলো-আধো ছায়া ভাব থাকে তেমনই ছিল। তা সত্ত্বেও সিনেম্যাটোগ্রাফির কাজ যথাযথই সামলেচেছেন সৌমিক হালদার। অভিজিত অমৃতার বদলে যাওয়া রসায়নে পুরনো গন্ধ মিশিয়ে দিয়েছেন অনুপম রায়। সবশেষে পরিচালনার প্রসঙ্গে আসতে হলে সৃজিত অন্যান্যবারের মতোই আরও একবার ছক্কা হাকিয়েছেন বটে। তাঁর পরিচালিত থ্রিলারের মধ্যে চতুষ্কোণ বা ভিঞ্চি দা এমনকি প্রিক্যুয়েল ২২শে শ্রাবণের সঙ্গেও তুলনা আসতেই পারে এই ছবির। তবে সেই মাণদণ্ডের বিচারে সৃজিত কত নম্বর পেলেন তা বলবেন দর্শক এবং এবং সপ্তাহন্তের বক্সঅফিস রিপোর্ট।

ছবি সৌজন্যেঃ এসভিএফ ইউটিউব