রানু ভট্টাচার্য|

সমগ্র বিশ্ব আজ করোনার কবলে জর্জরিত। এই মারণ ব্যাধি মানুষকে বিধ্বস্ত করে তুলেছে। মানুষ যখন অসহায় বোধ করে তখনই সে সাহায্য প্রার্থী হয় ঈশ্বরের। তাই কয়েকদিন আগেই আমরা কয়েকজনকে ফুল-পাতা সহকারে করোনা মাতার পূজা করতে দেখি, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে এই অন্ধবিশ্বাস আজকের নয়, তা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রাচীন কালে সত্যিই এমন এক দেবতার পুজো হত, যিনি নাকি জ্বর কমিয়ে দিতেন, নাম জ্বরাসুর।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং মেদিনীপুরের স্থান বিশেষে দোল-পূর্ণিমার দিন খুব ঘটা করে পুজো হত জ্বরাসুরের। মানুষের বিশ্বাস ছিল এই দেবতার পুজো করলে জ্বর, কলেরা, বসন্তের প্রকোপ কমবে। সেই বিশ্বাস থেকেই ইনি পূজিত হতেন দেবী শীতলার সঙ্গে।

তবে এই জ্বরের দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায় প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র, গ্রন্থ এবং সংস্কৃত কাব্যে। অনুমান করে বলা যায় যে, জ্বরের দেবতা ও অসুর জাতির কোনো আরোগ্য দেবতার মিশ্রনেই এই জ্বরসুরের সৃষ্টি। মনে করা হয়, ইনি বৌদ্ধ-সমাজেও পরিচিত ছিলেন। বৌদ্ধ-সমাজে দুই প্রকার মহাযানীর কথা আমরা জানতে পারি; যার সঙ্গে এই আরোগ্য দেবতার সম্পর্ক ছিল বলে অনুমান করা হয়।

• পর্ণশবরী – প্লেগ, জ্বর, রোগের অধিষ্ঠাত্রী

• যমান্তক বা যমারী সর্বামারী প্রশমনী – রং নীল তিনটি মাথা

এই জ্বরাসুরের বিশেষত্ব ছিল তাঁর চেহারা মধ্যে। তিনি কবন্ধ, পেটের উপর মুখ। আবার নাকি গনেশের মতো চতুর্ভুজও। তবে শুধু এদেশে নয়, বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন রূপে পূজিত হতেন আরোগ্য দেবতা। উড়িষ্যাতে ‘জ্বর-নারায়ন’, দক্ষিন ভারতে ‘মারীডিয়াম্মা’(নারী)।

আসলে মানুষের অন্ধবিশ্বাসই জন্ম দেয় এদের। বংলার ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক দেব-দেবীর নাম পাওয়া যাবে। যাদের অদ্ভুত নামের সঙ্গে সঙ্গে পূজার উপাচারও আশ্চর্যজনক। তবু কথায় রয়েছে ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর’-এর উপর ভিত্তি করেই মানুষ পাড়ি দেয় জীবন বৈতরণীতে।

তথ্যসূত্রঃ বাংলার লৌকিক দেবতা – গোপেন্দ্র কৃষ্ণ বসু

চিত্রঋণঃ উইকিপিডিয়া