গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
আজ থেকে ১০ বছর আগে (২০১১ সাল) চিলির (Chile) একদল গবেষক আন্টার্কটিকায় খনন কার্য চালিয়ে একটা দোমড়ানো ফুটবলের আকৃতির জীবাশ্ম উদ্ধার করেন। কিন্তু বহু পরীক্ষানিরীক্ষার পরেও ওটা কোন প্রাণীর জীবাশ্ম তা জানা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই জীবাশ্মটির কোনো পরিচিতি ছিল না গবেষক মহলে। এতদিন ওই জীবাশ্মটি চিলির ‘Chile’s National Museum of Natural History’ মিউজিয়ামে ‘The Thing’ বা ‘ওই বস্তু’ হিসাবেই পরিচিত ছিল।
সম্প্রতি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ এবং ‘বিবিসি’-এর প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, ২০১১ সালে অ্যান্টার্কটিকা থেকে পাওয়া এই অদ্ভুত বৃহদাকৃতির জীবাশ্মটি সম্ভবত, বিলুপ্ত প্রজাতির দৈত্যাকার সামুদ্রিক সরীসৃপের ডিমের নরম খোল (soft-shell)।

গবেষকদের দাবি, এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া নরম খোলের সব চেয়ে বড় ডিম হল ১০০০- ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে বিলুপ্ত হওয়া ‘মাদাগাস্কান এলিফেন্ট বার্ড’-এর। যার ডিমগুলি ছিল (৩৩ সেন্টিমিটার) দীর্ঘ, এবং তরল ধারনক্ষমতা ছিল ৮.৫ লিটার, যা প্রায় ৭টি উটপাখির ডিমের সমান।
সেই মতো মাদাগাস্কান এলিফেন্ট বার্ডের পরেই স্থান পেয়েছে নতুন আবিষ্কৃত আন্টার্কটিকার ওই ডিম। এ সম্পর্কে ‘টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের’ গবেষকরা জানিয়েছেন, “এটি একটি ৬৮ মিলিয়ন বছরের পুরনো নরম খোলের ডিম, যা প্রায় ২৮.১৮ সেন্টিমিটারেরও বেশি দীর্ঘ। এটি কোনও পরিচিত প্রাণীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিম।”

এবের প্রশ্ন হল এটি কীসের ডিম? ‘জ্যাকসন স্কুল অফ জিওসায়েন্স এবং টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষক ডঃ লুকাশ লেজেন্ড্রে বলেছেন, “এটি জীবাশ্মটি একটি বড় ডায়নোসর আকারের কোনো প্রাণীর ডিম, তবে এটি ডায়নোসরের ডিমের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আন্টার্কটিকার এই ডিম অনেকটা টিকটিকি এবং সাপের ডিমের মতো নরম খোল যুক্ত। যা পাখি, কুমির এবং ডায়নোসরের হয় না।”
তাঁর দাবি, ওই ডিম ৭ মিটার বা ২৩ ফুট দীর্ঘ কোনো সরীসৃপ প্রানীর, যারা খুবই নরম খোলের ডিম পাড়ে, এবং ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফুটে ছানা বেরিয়ে আসে। যে পাথরের মধ্যে থেকে ডিমটি পাওয়া গেছে, সেখানে শিশুর এবং প্রাপ্তবয়স্ক মোসাসরাসদের জীবাশ্ম সহ প্লেসিয়োসরাস নামক আরেকটি প্রাগৈতিহাসিক সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্মও রয়েছে।

সব মিলিয়ে গবেষকদের আপাত অনুমান, ওই ডিম সম্ভবত উক্ত দুই প্রজাতির যে কোনও একটির থেকেই এসেছে। মোসাসরস প্রায় ৫০ ফুট দীর্ঘ পর্যন্ত বাড়ে, যা একটি বাসের দৈর্ঘ্যের সমান। অপরদিকে প্লেসিয়োসরাস ৩৩ ফুট দীর্ঘ হয়।
৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে গ্রহাণুর পতন হওয়ার পর ডায়নোসরাস সহ মোসাসরাস এবং প্লেসিয়োসরাস বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে এই ডিম মোসাসরাসের বলেই মনে করা হচ্ছে। এই প্রাগৈতিহাসিক ডিমের জীবাশ্ম ওই প্রচলিত চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ জানায়, যেখানে বলা হয় এই সকল দৈত্যাকার সামুদ্রিক প্রাণীগুলি ডিম দিত না বলে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি, ইন্ডিপেডেন্ট
ছবিঃ রয়টার্স, গেট্টি ইমেজেস, কমনস উইকিমিডিয়া