কল্লোল মুখার্জী|

যেসব লোকশিল্প বাংলাকে বিশ্বের আঙিনায় তুলে ধরেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পটশিল্প। কিন্তু কীভাবে উৎপত্তি হল এই পটশিল্পের, তার পিছনে রয়েছে এক মনজ্ঞ গল্প। যে গল্প মেদিনীপুরের এক পটশিল্পী বলেছিলেন লেখক আয়ুব হোসেনের কাছে। সেই গল্পটিই তুলে ধরছি এখানে।

অতি প্রাচীনকালে আরব দেশে এক রাজা ছিলেন। অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল তার রাজ্য। সেই রাজ্যের ঠিক দক্ষিণে ছিল একটা গহিন বন। ওই বনেই আবির্ভাব হয়েছিল এক দৈত্যের। সে নষ্ট করে দিতে থাকল ক্ষেতের সমস্ত ফসল। ফলে টান পড়ল রাজ্যের শস‍্যভাণ্ডারেও। খাদ্যাভাবে মারা যেতে শুরু করলেন প্রজারা। অনেক চেষ্টা করেও রাজা মারতে পারলেন না ওই দৈত্যকে। তখন রাজা দৈত্যের সঙ্গে চুক্তি করলেন যে প্রতিদিন রাজ্যবাসী ভালোমন্দ খাবার রেখে আসবে দৈত্যের জন্য, তিনি যেন ফসল নষ্ট না করেন। অন্যদিকে দৈত্যের অগোচরে রাজা ঘোষণা করলেন, যে দৈত্যকে বধ করতে পারবে তাকে মোটা অঙ্কের অর্থ, পুরস্কার স্বরূপ দেবেন তিনি। অর্থলোভে অনেকেই এলেন দৈত‍্যকে বধ করতে, কিন্তু সকলেই মারা গেলেন তার হাতে।

সে সময় আরব দেশগুলির সঙ্গে জলপথে বাণিজ্য হত বাংলার। বাণিজ‍্যে আসা বণিকদের থেকে সেই গল্প ছড়িয়ে পরল এদেশেও। দারিদ্র্য দূর করতে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই আরবদেশীয়দের নৌকায় চেপে বসলেন এক বলশালী বাঙালি সন্তান। ভিনদেশে পৌঁছে কিছুদিন রাজভবনে বিশ্রাম করে, তিনি গেলেন দৈত‍্য নিধনে। এক ভয়ংকর যুদ্ধের পর তিনি পরাজিত করলেন দৈত‍্যকে। বধান্তে তার খেয়াল হল, তিনি যুদ্ধ করতে করতে অনেক গভীর বনে প্রবেশ করেছেন। এখান থেকে দৈত‍্যের দেহ নগরে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু দেহ না নিয়ে গেলে রাজা কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে দৈত‍্য মারা গেছে।

তখন তিনি বনের পাতা, আঠা দিয়ে জুড়ে জুড়ে বানালেন এক পট। আর দৈত‍্যের রক্ত দিয়ে তার উপরে আঁকতে শুরু করলেন কীভাবে তিনি বধ করেছেন ওই দৈত‍্যকে। তাঁর এই পটচিত্র দেখে খুশি হলেন রাজা। তাকে পুরস্কৃত করলেন, দিলেন চিত্রকরের সম্মান। পরবর্তীকালে এই চিত্রকরের থেকে শিখে শিখেই বাংলায় শুরু হয় পটচিত্র অঙ্কন এবং ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন প্রান্তে।

তথ‍্য সূত্র: বাংলার লোককথা – আয়ুব হোসেন।
ছবি ঋণ: ওড়িশা ট‍্যুরিশম, ওয়ান্ডারস অফ ইন্ডিয়া, পিক্সাবে