গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

বিকেলে বাড়ি থেকে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলেন এক দক্ষিণী যুবক, দেখেন গ্রামের কমিউনিটি সুইচবোর্ডের ভিতর একটি ছোট নীলরঙের পাখি খড়কুটো জোগাড় করছে। পাখিটিকে চিনতে না পারলেও বুঝতে পেরেছিলেন বাসা বানাচ্ছে ওই পাখি।গ্রামের রাস্তার ৩৫টি বাতিস্তম্ভের আলো জ্বলে এই সুইচ বোর্ড থেকেই। বাড়ির কাছে হওয়ায় ওই যুবকই সন্ধ্যা ৬টায় আলো জ্বালিয়ে দেওয়া ও ভোর ৫টায় তা নিভিয়ে দেওয়ার কাজ করতেন। তিনদিন পর এই কাজেই যখন সেই যুবক সুইচবোর্ডের কাছে যান, দেখেন বাসার মধ্যে রয়েছে তিনটি ছোট সবুজাভ ডিম।

যুবক সিদ্ধান্ত নেন, পাখিকে তার ডিমসহ নিরাপদেই থাকতে দেবেন তিনি। কিন্তু এর মানে হল, যতদিন পর্যন্ত পাখি নিজে বাসা ভেঙে না দিচ্ছে, ততদিন জ্বালানো যাবেনা ওই ৩৫টি আলো, যা গ্রামের ১০০টি বাড়ির মানুষকে পথ চলতে আলো দেয়। তখনই পাখির বাসার ছবি তুলে গ্রামবাসীদের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেন তিনি। অনুরোধ করেন কিছু দিনের জন্য এই সুইচবোর্ড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার। প্রকৃতি মাকে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারবেন ভেবে অনেক গ্রামবাসীই রাজি হয়ে যান এই প্রস্তাবে। কিন্তু পাখির বাসার জন্য রাস্তার আলো বন্ধ রাখার প্রস্তাব হাস‍্যকর মনে হয় বাকি গ্রামবাসীর কাছে।

তখন ওই গ্রামবাসীদের বোঝানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেন যুবক। গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নিজে দেখতে যান পাখির বাসা। সিদ্ধান্ত হয়, যতদিন না ডিম ফুটে বাচ্চা বের হচ্ছে এবং সেই বাচ্চারা বড় হচ্ছে ততদিন বন্ধ রাখা হবে এই বোর্ডের বিদ্যুৎ সরবরাহ, টর্চ বা মোবাইলের আলোতেই পথ চলবেন গ্রামবাসীরা।

যুবকের নাম ‘কারুপ্পু রাজা‘, ঘটনাটি তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার পোত্থাকুড়ি গ্রামের। পাখিটি বুলবুল।পাখির ডিম পাড়া থেকে আজ ৪০দিনের বেশি সময় অতিবাহিত। পক্ষীশাবকগুলির ডানাও হয়েছে এখন। কারুপ্পু রাজা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সেই ছবি। ৩৫ দিন রাস্তার আলো জ্বালাননি গ্রামবাসীরা, শুধু নিরাপদ আশ্রয় দেওয়াই নয়, এতদিন নিয়ম করে সেই পাখির বাসার রক্ষণাবেক্ষণও করেছেন গ্রামবাসীবৃন্দ। স্বার্থপরতার এই দুনিয়ায় সত্যিই মানবিকতার এক চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল পোত্থাকুড়ি গ্রাম।

ছবি ঋণ: পিক্সাবে, কারুপ্পু রাজা।