গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।

লাক্ষাদ্বীপের মিনিকয় দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা আলী মানিকফান। তিনি হলেন ১০২ জন বিশিষ্ট ভারতীয়র মধ্যে একজন, যিনি এ বছর দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, পদ্মশ্রী পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।

৮২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ কোনও বিষয়ে প্রথাগত প্রশিক্ষণ না নিয়েও বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। ১৯৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মানিকফান। তাঁর বাবা-মা স্কুলে পড়াশোনার জন্য তাঁকে কেরলে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন স্কুল ছেড়ে দ্বীপে ফিরে আসেন। তবে এখানেই তিনি থেমে যাননি, বাড়ি ফিরে নিজের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ভাষা রপ্ত করেছিলেন। মানিকফান এমনই একজন ব্যক্তি যিনি একসঙ্গে  ইংরাজী, হিন্দি, মালায়ালাম, আরবি, লাতিন, ফরাসি, রাশিয়ান, জার্মান, সিংহলী, ফারসি, সংস্কৃত, তামিল এবং উর্দু সহ বেশ কয়েকটি ভাষা জানেন।

তবে তাঁর দক্ষতা কেবল ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান, সামুদ্রিক গবেষণা, ভূগোল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ঐতিহ্যবাহী জাহাজ নির্মাণ, মৎস্য, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও জ্ঞান প্রসারিত করেছিলেন।

সেন্ট্রাল মেরিন ফিশারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কাজ করার সময় তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ দক্ষতা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ডঃ সানথাপ্পান জোন্সকে নতুন একটি মাছের প্রজাতি আবিষ্কার করতে সহায়তা করেছিল। সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ দক্ষতা এবং জ্ঞান দ্বারা প্রভাবিত জোন্স নতুন প্রজাতিটিকে ‘আবুদেফদুফ’ মানিকফানি’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

১৯৮১ সাল, মানিকফান এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে একটি প্রাচীন আরব জাহাজ পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ওমানের ট্রেডিং জাহাজ সোহরকে পুনর্নির্মাণের জন্য আইরিশ অ্যাডভেঞ্চারার টিম সেভেরিন তাঁর কাছে এসেছিলেন। ওমানের সোহর শহরের নামানুসারে জাহাজটি পুরোপুরি তাঁর হাতে তৈরি হয়েছিল, আশ্চর্যজনক বিষয় হল ঐতিহ্যবাহী এই জাহাজ নির্মাণে কোনও ধাতুর ব্যবহার হয়নি। ২ মিটার দীর্ঘ জাহাজটি তৈরি করতে এক বছর সময় লেগেছিল তাঁর। সোহর এখন ওমানের একটি যাদুঘরে দেখা যায়।

মানিকফান পুরো বিশ্বের জন্য একটি চন্দ্র ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন। জ্যোতির্বিদদের সঙ্গে আলোচনার পরে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন যে মুসলমানদের চন্দ্র ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন সেট ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি সমস্ত মুসলমানকে একীভূত করতে হিজরি ক্যালেন্ডার গ্রহণ করার উপায় খুঁজতে চেষ্টা করেন।

এখানেই শেষ নয়, তামিলনাড়ুর ভল্লিউুরে তার ১৫ একর জমির জন্য তিনি একটি উইন্ডমিল থেকে নিজের বিদ্যুত উত্পাদন করেন। যা তিনি নিজেই ডিজাইন করেছিলেন। এমনকি তাঁর বাড়িতে একটি ফ্রিজ রয়েছে, যা তিনি নিজের হাতেই নির্মাণ করেছিলেন।

ছবিঃ ফেসবুক