রানু ভট্টাচার্য|

হ্যাঁ সত্যি ! এমন কথা ভাবলে আমাদেরও চমক লাগে বটে। চমক লেগেছিল পুলিশ কোর্টের উকিল সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যয়েরও। যিনি ছিলেন গুরুদেবের অত্যন্ত স্নেহের পাত্র। তাই নিজের নামে আদালতের সমন পেয়ে ঠাকুরবাড়ির পুরনো ভৃত্য গোপালকে তা দিয়ে বলেছিলেন “এখনই কাছারিতে যাও সৌরীনের কাছে, তাঁকে গিয়ে বলবে এ তলব বন্ধ করা চাই। না হলে তাঁদের রবিঠাকুর হার্টফেল করবে”।

কিন্তু কেন? কেন এই তলব? তাও কিনা স্বয়ং গুরুদেবকে। এ ঘটনার সূত্রপাত মাসদুয়েক আগে। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে বসেছে সান্ধ্য আসর। কবি সত্যেন্দ্রনাথ পড়ছেন তাঁর নতুন লেখা। চলছে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। এছাড়াও দ্বিজেন্দ্রনারায়ন বাগচী, মনিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। কে নেই সে আসরে! কিন্তু সভার মধ্যমণি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ নিজেকে মুড়ে রেখেছেন বিষন্নতার চাদরে। কারণ জিজ্ঞাসা করায় যা বললেন, তা শুনে উপস্থিত সকলেরই ‘চক্ষু চড়কগাছ’। কবি জানালেন, “তোমাদের রবিঠাকুর আর তেমন লেখা লিখতে পারবেন না”।

গুরুদেবের এহেন মন্তব্যের কারণ জানা গেল খানিকক্ষণের মধ্যেই, তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ঝরনা কলমটি হারিয়ে গেছে। আর তাই তিনি এত বিমর্ষ।

ঘটনার প্রায় মাস দু’য়েক পরে জানা যায় সেই কলমটি হারিয়ে যায়নি, চুরি হয়েছিল। যার শনাক্তকরণের জন্যই কবিগুরুর কাছে পৌঁছেছে এই সমন পত্রটি। সৌরীন্দ্রমোহন বুঝলেন তড়িঘড়ি তাঁকেই কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি সেই সমন নিয়ে ছুটলেন থার্ড প্রেসিডেন্ট ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান খাঁ সাহেবের কাছে। যিনি পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট হলেও নেশায় সাহিত্যরসিক এবং অন্ধ রবীন্দ্রভক্ত। তিনিই কবির পুরনো ভৃত্য গোপালকে দিয়ে কলম শনাক্ত করিয়ে এ মামলার ইতি টানলেন।

এ মামলার নিষ্পত্তির পর যখন সৌরীন্দ্রমোহন নিজে গিয়ে কবিকে জানালেন সমস্ত কথা, কবি তখন হেসে বলেছিলেন – “তোমার জন্য আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অকালমৃত্যু থেকে বেঁচে গেল”।  

তথ্যসূত্র – অচেনা লালবাজার – সুপ্রতিম সরকার, উকিলের ডায়েরি – সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়

ছবি – দ্য প্রিন্ট, দ্য স্টেটসম্যান