লেখা- আদিত্য গুপ্ত |
পলাশীর যুদ্ধ ও তার অমোঘ পরিণতির কথা যতবার আলোচনা হয়, সিরাজদৌল্লা, রবার্ট ক্লাইভের সমান্তরালে মীরজাফরের নাম উঠে আসেই। বিশ্বাসঘাতকতার এক চরম মূর্তি যেন তিনি। ৭৪ বছর বয়সে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মীরজাফর। নবাব হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই। ভয়ঙ্কর অসুখে তিলে তিলে মৃত্যু হওয়াটা মীরজাফরের শেষজীবনকে মর্মান্তিক এক চেহারা দিয়েছিল। যাই হোক, আমরা এই লেখায় কথা বলব মীরজাফরের বড় ছেলে মীরনকে নিয়ে। আদ্যন্ত নৃশংস, নীচ, হীন এক মানুষ ছিলেন তিনি। কতটা নৃশংস? একটা উদাহরণই যথেষ্ট। সিরাজকে হত্যা করার পরে তাঁর খণ্ডিত দেহাংশ সিরাজের মা আমিনা বেগমকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন! হত্যার একরকমের নেশা ছিল মীরনের। কিন্তু তিনি কখনও কি ভাবতেও পেরেছিলেন তাঁর নিজের জীবনের শেষটা কেমন হবে? অদ্ভুত ভয়ঙ্কর এক নেমেসিসের অব্যর্থ আঘাত নেমে আসবে তাঁর উপরে!
১৭৬০ সালে আমিনা বেগম ও ঘষেটি বেগমকে হত্যা করার জন্য তিনি ঢাকার শাসনকর্তাকে চিঠি লেখেন। সেই শাসনকর্তা অবশ্য বিনা কারণে দুই অসহায় মহিলাকে মেরে ফেলতে রাজি হননি। তিনি পাল্টা চিঠি লিখে জানান, তিনি একাজ করতে পারবেন না। মীরন যেন ঢাকার জন্য অন্য শাসনকর্তা নিয়োগ করে এই কাজ সম্পন্ন করেন।
তখন মীরন নিজে লোক পাঠিয়ে তাঁদের দুজনকে ডেকে পাঠান। শেষ পর্যন্ত মাঝনদীতে জলে ফেলে দেওয়া হয় দুই অসহায় বৃদ্ধাকে। মৃত্যুর আগে সিরাজের মা আমিনা বেগম অভিশাপ দেন, মীরনের উপরে যেন ঈশ্বরের রোষাগ্নি বর্ষিত হয়।
এই মৃত্যু সংবাদে মীরন যখন চরম আহ্লাদিত, তখন তিনি ভাবতেও পারেননি মৃত্যুর কালো মেঘ তাঁর মাথার পিছনে ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। সেই ঘটনার মাত্র আটদিনের মাথায় মারা যান মীরন। অদ্ভুত মৃত্যু। আজিমগঞ্জের কাছে এক গভীর জঙ্গলে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল নারী ও অন্যান্য বিলাসব্যসনের বন্দোবস্ত। বাইরে তখন কালো অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে চারদিক বেসামাল। তাঁবুর মধ্যে কামুক মীরন। সঙ্গে দু’জন দেহোপজীবিনী। চলতি কথায় বেশ্যা। আর ছিল এক ‘আলাপিনী’। এই আলাপিনীরা রাজা-বাদশাদের গল্প শোনাত। চমৎকার ভঙ্গিতে গল্প শোনাত তারা। সেই অন্ধকার রাতেও সুরার নেশায় গল্পের মৌতাতে বুঁদ হয়ে বসেছিলেন মীরন। অকস্মাৎ প্রবল ঝড়বৃষ্টির সেই রাতে বাজ পড়ে মীরনের মাথায়! কেবল মীরন নন, সেই গল্প বলিয়ে মহিলারও মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। এইভাবে ইতিহাসের পাতায় জন্ম নিয়েছে নেমেসিসের এক আশ্চর্য মিথ। মৃত্যুর পরে নাকি মীরনের পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে রাখা এক তালিকার সন্ধান মিলেছিল। যেখানে প্রায় তিনশোজনের নাম ছিল। এদের সকলকেই মেরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল মীরনের!
শেষ করার আগে একটা অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। বলা হয়, এই বজ্রপাত ও তাঁবুতে আগুন লেগে যাওয়ার গল্পটি বানানো। আসলে নাকি ইংরেজদের নির্দেশে মেজর ওয়ালস হত্যা করেছিলেন মীরজাফরের পুত্রকে। তারপর সেই হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাউর করে দেওয়া হয় এই গল্প। এইভাবেই ইতিহাসের শরীর জুড়ে একেক সময় পাক খেয়ে জড়িয়ে থাকে মিথ ও মিথ্যের কানাঘুষো।
(তথ্যসূত্র: বৃহৎ বঙ্গ/ দীনেশচন্দ্র সেন)
কমেন্টস
সাবলীল , সুন্দর লেখা , অত্যন্ত মনোগ্রাহী পেজ ডিসাইন , সব মিলিয়ে খুব উপভোগ করলাম
Nice stry nice update..thank you.
Romanchakor
সিরাজদৌল্লা ও লুৎফাউন্নিসর প্রেমের ইতি মীরজাফরের বিশ্বাস ঘাতকাতায় হয়েছিল । তা্রপররের অংশ আপনার থেকে জানলাম । মিথ ও মিথ্যা র সম্পর্কেও জানলাম । ধন্যবাদ
Khub valo laglo pore.
খুব ভালো লাগলো পড়ে। অজানা কিছু তথ্য জানতে পারলাম।
Khub valo tothoyo somriddho lekha. Pore khub annondo upovog korlam.
Pinaki modadk.
Khub valo akta lekha
সত্যি আমরা কত কিছুই জানিনা ।কেউ যখন কিছু অজানা তথ্য জানিয়ে যান তখন মনে হয় জ্ঞান কিছুটা বাড়ল।
পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।