গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মেরু অঞ্চলের পরিবেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এর ফলে ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন আর্কটিকের মেরু ভাল্লুকদের জীবন। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় তারা হয়ে উঠছে অভাবনীয় নৃশংস। তারা খেয়ে ফেলছে নিজেদের শাবক! এভাবেই চলতে থাকলে আর্টিকের ভাল্লুক একসময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মেরু ভালুকের রাক্ষুসে স্বভাব নতুন কিছু নয়, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা খাদ্য এবং সংস্থানের জন্য যে নৃশংস আচরণ শুরু করেছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি।
এর কারণ হিসাবে জানা গিয়েছে, অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং মানুষের কার্যকলাপের ফলে আর্কটিকের তুষারাবৃত সমভূমিগুলি ক্রমশ গলতে শুরু করেছে। ফলস্বরূপ মেরু ভাল্লুকদের বাসস্থানগুলি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বরফ গলে যাওয়ার ফলে তাদের প্রয়োজনীয় খাবারের জোগানেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তাই উপায় না পেয়ে বেঁচে থাকার জন্য নিজের প্রজাতিকেই খেয়ে ফেলছে ভাল্লুকগুলো।
গবেষকদের মতে, আর্কটিকের মেরু ভাল্লুকের এরূপ আচরণের মূল কারণ হল, তাদের বাসস্থানে খাদ্য সরবরাহের ঘাটতি। বিশালাকৃতির পুরুষ ভাল্লুকগুলি, স্ত্রী ভাল্লুক এবং তাদের শাবকগুলিকে আক্রমণ করে মেরে ফেলছে। কারণ পুরুষ ভাল্লুকদের থেকে স্বভাবতই দুর্বল হয় তারা।
মেরু ভাল্লুকেরা সাধারণত সমুদ্রের উপর জমে থাকা বরফের মধ্যে তাদের শিকার খোঁজে। সেদিক থেকে দেখলে সিল এবং মাছ তাদের নিত্য দিনের খাদ্য। তবে বরফ গলে যাওয়ার কারণে, ভাল্লুকগুলিকে সমুদ্রের তীরের কাছে যেতে বাধ্য হয়। আর সেখানে তারা স্বাভাবিকভাবেই শিকার করতে পারে না।
মানুষের হস্তক্ষেপও আর্কটিকের ভাল্লুকদের আবাসকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। উপসাগরীয় উপত্যকাগুলি এখন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করতে ব্যবহৃত হয়, ফলে জাহাজের আনাগোনা ওই স্থানে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাশিয়ান বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির সোকোলোভ এ বিষয়ে বলেছেন, “মেরু ভাল্লুকেরা যে জলবায়ুতে থাকতে অভ্যস্ত ছিল, তার চেয়ে বেশি গরম পড়ছে, বিশেষত নরওয়ের উত্তর দিকে স্পিটসবার্গেন দ্বীপের দিকে। ফলে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে মেরু ভাল্লুকদের জীবন।”
বর্তমানে মেরু ভাল্লুকগুলি নিজেদের শাবকদের মেরে ফেলার পর, যতটুকু প্রয়োজন খেয়ে বাকি মাংস তারা বরফের মধ্যে পুঁতে রাখছে, পরে খাওয়ার জন্য। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় ‘ক্যাকিং’। যা সাধারণত বাদামী ভাল্লুকদের মধ্যে দেখা যেত। তবে এখন তা মেরু ভাল্লুকদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে।
এভাবেই যদি মেরু ভাল্লুকের সংখ্যা কমতে থাকে তাহলে এক সময় তারা আর্কটিক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তারপর একে একে পৃথিবী থেকেও মুছে যাবে এই প্রাণীটি। এই সব কিছুর জন্য একমাত্র দায়ী মানুষ। আমরা যদি প্রতিনিয়ত গাছ কেটে যাই আথবা এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাই যার ফলে বিশ্বউষ্ণয়ন বা গ্লোবার ওয়ারমিং হয় তাহলে এই প্রাণীগুলি বিলুপ্ত হবে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই।
ছবি সৌজন্যেঃ রয়টার্স এবং উইকিপিডিয়া