গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে গণেশ চন্দ্র এভিনিউ ক্রসিং। সেই ক্রসিং থেকে বি.বি.ডি. বাগের দিকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই একাটা পুরনো গাড়ি পার্কিং এরিয়া রয়েছে। তার গা ঘেঁষেই রয়েছে একটা বন্ধ হওয়া পেট্রোল পাম্প। তার ঠিক পিছনেই আছে বহুদিন পুরনো একটা বিল্ডিং। সেই বিল্ডিং-এ একটি বোর্ডে লেখা রয়েছে ইয়াউ চিউ রেস্টুরেন্ট (Eau Chew Restaurant)। নামটি পড়েই বোঝা যাচ্ছে এটা কোনও বাঙালি রেস্তোরাঁ নয়। উত্তর কলকাতার চাইনিজ খাবারের প্রাচীনতম রেস্তোরাঁ হল ইয়াউ চিউ রেসটুরেন্ট।

শোনা যায় ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেই এই রেস্টুরেন্টটি আছে। তবে রেস্তোরাঁটি ঠিক কবে স্থাপিত হয় সে বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। কারোর মতে রেস্তোরাঁটি ১৯২৭ সালে প্রথম খোলা হয়েছিল, আবার কেউ মনে করেন এটি ১৯২২ সালে তৈরী হয়েছিল। তবে যখনই তৈরী হোক না কেন, ‘ভারতীয় চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে ইয়াও চিউ রেস্টুরেন্ট-কে সব থেকে প্রাচীন চাইনিজ রেস্তোরাঁ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মন এবং পেট ভরে খাঁটি চাইনিজ খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে যেতে পারেন এই রেস্তোরাঁয়।

সাত তারা রেস্টুরেন্ট বা ফুটপাতের গুমটি খাবারের দোকান সবেতেই চাইনিজ খাবারের রমরমা। চাইনিজ খাবারের প্রতি মানুষের চাহিদা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। তবে সাধারণত যে ধরণের চাইনিজ খাবারগুলি আমরা খেয়ে থাকি তার চাইতে খাঁটি চাইনিজ খাবারের স্বাদ একেবারেই ভিন্ন। কারণ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যারা চাইনিজ খাবার বিক্রি করেন তারা কেউ চিনা বংশোদ্ভূত হয় না। আবার টেরিটিবাজার চত্বরের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক বছর আগে বহু চিনা মানুষ কলকাতায় এসে এই জায়গায় বসবাস শুরু করে। তখন থেকেই এখানে বিক্রি হয় রকমারি চাইনিজ ফুড। আর সেই সব খাবার তৈরী হতো চিনা পরিবারের হেঁসেল থেকেই। যদিও শুরুর দিকে শুধুমাত্র চিনারাই সেই সকল খাবার খেতেন। ধীরে ধীরে বাঙালিদের কাছেও আতি প্রিয় হয়ে ওঠে সেই খাবার। এবার ফিরে আসা যাক ইয়াও চিউ’র কথায়। 

জানা গিয়েছে ‘হুয়াং ফ্যামিলি’ নামের একটি চিনা পরিবার ভারত স্বাধীন হওয়ার বহু বছর আগে কলকাতায় এসেছিলেন। সংসার চালাতে তারা কলকাতার বুকেই একটি রেস্তোরাঁ খুলে ব্যবসা শুরু করেন। সেই প্রাচীন রেস্তোরাঁই হল ‘ইয়াও চিউ’। এই রেস্তোরাঁয় যেহেতু হুয়াং পরিবারের সদস্যরাই রান্না করেন তাই খাবারগুলি খাঁটি চাইনিজ স্বাদের ভরপুর হয়। যা কলকাতার অন্যান্য চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলি থেকে একেবারেই ভিন্ন। বর্তমানে এই পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম ‘জোয়েল হুয়াং এবং ডোরেন হুয়াং’ এই রেস্তোরাঁর মালিক।

রেস্তোরাঁটির আকর্ষণীয় খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘জোসেফাইনস্‌ নুডলস’ ও ‘চিমনি সুপ’। হুয়াং পরিবারের এক সদস্য জোসেফ হুয়াং এই বিশেষ পদটি প্রথম তৈরী করেছিলেন বলে, তাঁর নাম দিয়েই এই খাবারটির নামকরণ হয়। নুডলসটি বানানো হয় নানা সবজি, মাংস, ডিম, মাছ ও সিক্রেট মশলা দিয়ে। এছাড়াও রয়েছে চিমনি সুপ। যা পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি বিশেষ পাত্রে সার্ভ করা হয়। ওই পাত্রের ঠিক মাঝখানে একটি ছোট্ট চিমনিতে রাখা থাকে কাঠকয়লা। সুপটিকে গরম রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা। সুপটি তৈরী হয় ডিম, চিকেন, চিংড়ি, বিশেষ মাছ, পর্ক ও সবজি দিয়ে। এছাড়া এই রেস্তোরাঁর জনপ্রিয় কিছু খাবার হল  ‘ম্যান্ডারিন ফিশ’, ‘সেজওয়ান ফ্রায়েড রাইস’, বাটার গার্লিক প্রন’, ‘গার্লিক পর্ক’ ইত্যাদি।

তাহলে আর দেড়ি কিসের? খাঁটি চাইনিজ খাবারের স্বাদ নিতে হলে আজই ঘুরে আসুন ইয়াও চিউ রেস্টুরেন্ট থেকে। আর নাম না জানা বিভিন্ন স্বাদের নতুন নতুন চাইনিজ খাবারের মজা নিন কলকাতায় বসে।