গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

১৯ ফেব্রুয়ারি, সাল ১৯৯৪। রাত ৮টা বেজে ১৫ মিনিট, এমন সময় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছে ক্যানসার আক্রান্ত এক তরুণী। তার শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তাই দেরি না করে তাকে এমারজেন্সিতে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়ার পর, তার রক্তপরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই সময় ঘটে গেল এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। রোগীর রক্ত সংগ্রহ করতে করতেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। কিছু সময় পর জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন তাঁরা! এইভাবে এক রাতের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন অনেকে। এই অদ্ভুত ঘটনাটি রাতারাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সারা আমেরিকায়। সংবাদমাধ্যমগুলিতে তখন একটাই শব্দবন্ধ ‘দ্য টক্সিক লেডি’।        

নব্বইয়ের দশকের এই ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছিল আমেরিকাকে। অসুস্থ ওই তরুণীর নাম ছিল গ্লোরিয়া রামিরেজ (৩১)। আমেরিকার ওই তরুণী আক্রান্ত ছিলেন ক্যানসার রোগে। চিকিৎসার মধ্যে দিয়েছে চলছিল তার জীবন। তবে ১৯৯৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎই গ্লোরিয়া প্রবল শ্বাসকষ্টের শিকার হন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসার জন্য এমারজেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য করেন, গ্লোরিয়ার নিঃশ্বাস অদ্ভুত ঝাঁঝালো গন্ধ মিশ্রিত। এমন কি তার বুকের চামড়াও সাধারণ নয়। দেরি না করে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিলেন রোগীর রক্ত পরীক্ষা কারার। আর সেখানেই শুরু হয় সমস্যা! রক্ত সংগ্রহ করার সময় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা রক্ত থেকে ক্যামিক্যালের ন্যায় তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পান। শুধু তাই নয়, সেই রক্তের মধ্যে দৃশ্যমান ছিল অদ্ভুত একটি পার্টিকেল। ওই সময়েই এমারজেন্সিতে কর্মরত পর পর তিন জন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর জ্ঞান হারান। এখানেই শেষ নয়। গ্লোরিয়ার কাছাকাছি যারাই যায় সকলেই অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন। কিন্তু গ্লোরিয়ার কাছে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁরা সকলেই শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। এইভাবে এক রাতে মোট ২৩ জন অসুস্থ হয়ে ছিলেন। যাদের মধ্যে ৫ জনের শারীরিক অববস্থার এতটাই অবনতি হয় যে তাদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়।      

তবে দুঃখের বিষয় এসবের মাঝে গ্লোরিয়ার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। অন্য দিকে চিকিৎসকরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কারণ যে ওই রোগীর কাছে যাচ্ছে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। ওই রাতেই মারা গিয়েছিলেন গ্লোরিয়া রামিরেজ।

মৃত্যুর ১০ দিন পর গ্লোরিয়াকে কবর দেওয়া হয়েছিল। এক সপ্তাহের বেশিদিন ধরে চলেছিল তার শারীরিক পরীক্ষা। অন্য দিকে বিভিন্ন খবরের কাগজে গ্লোরিয়া হয়ে ওঠে রহস্যময়ি ‘টক্সিক লেডি’। গ্লোরিয়ার মৃতদেহ থেকে যাবতীয় নমুনা সংগ্রহের পর গবেষণা শুরু করেছিলেন চিকিৎসকরা। ওই গবেষণায় উঠে এসেছিল বেশ কিছু তথ্য। তবে সবটাই ছিল আনুমানি, ওই ঘটনার সঠিক কারণ আজও অধরা। চিকিৎসকরা মনে করেছিলেন অসুস্থ হওয়ার পর, বাড়িতে থাকাকালীন গ্লোরিয়া এমন কোনও বিশেষ ওষুধ নিতেন, যার মধ্যে মজুত ছিল ডাইমিথাইল সালফক্সাইড। যা গ্লোরিয়ার দেহে বিষক্রিয়া ঘটায়। হাসপাতালে আসার ওই সেই বিষক্রিয়া আরও প্রকট হয়ে। যার ফলে গ্লোরিয়া মারা যায় এবং তার আগে পর্যন্ত কেউ তার সংস্পর্শে যাওয়া মাত্রই অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

গ্লোরিয়াকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল অলিভউড মেমোরিয়াল পার্কে। পুরোটা পড়তে গল্পের মতো লাগলেও এটা ছিল একেবারেই সত্য ঘটনা। ১৯৯৪ সালে আমেরিকার সংবাদ পত্রগুলিতে আজও জীবিত ‘দ্যা টক্সিক লেডি’।

ছবিঃ আমিউজিংপ্ল্যানেট