শুভজিৎ দে|

ইংরেজ গভর্নর লর্ড ডালহৌসীর স্মৃতি বহনকারী সুবিখ্যাত পার্ক। ভেতরে মস্তবড় দীঘি, নাম লাল দীঘি। সামনেই উত্তর দিকে প্রকান্ড লাল বাড়ি – রাইটার্স বিল্ডিং। বাংলা তথা ভারতের ইংরেজ শাসনের পাকাপোক্ত দপ্তরখানা। পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোনে দাঁড়িয়ে আছে হলওয়েল মনুমেন্ট। যা মনে করিয়ে দেয় অন্ধকূপ হত্যার কথা। ঠিক যেন ঐতিহাসিক মিথ্যাচারের অনৈতিহাসিক নিদর্শনের মতো। উত্তর-পূর্ব কোণে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেখা যায় সেন্ট জনস চার্চ। চার্চের পূর্ব দিকে ওল্ড কোর্ট হাউস কর্ণার। ছোটো একটি সরু রাস্তার নাম ওটা। ঐ রাস্তা এসে মিসেছে লালবাজার ষ্ট্রীটের সঙ্গে। এই লালবাজার ষ্ট্রীটের ওপর অবস্থিত লালবাজার পুলিশ হেড কোয়ার্টার। লাল দীঘি, লালবাড়ি, লালবাজার অর্থাৎ সবই লালে লাল। মহারাজ রণজিৎ সিং একদিন ভারতবর্ষের মানচিত্রে ইংরেজদের অধীনস্থ প্রদেশগুলি লাল রঙে রাঙিত দেখে, তিনি সখেদে মন্তব্য করেছিলেন, ” সাব লাল হো যায়েগা ! ” অর্থাৎ গোটা ভারতবর্ষটা ইংরেজদের পদানত হয়ে যাবে, তাই হয়েছে। ” বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল, পোহালে শর্বরী, রাজদন্ড রূপে। “

বণিকের বেশে ভারতে এসেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোকের। সেই ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের ফলে কোম্পানিই একদিন হয়ে উঠল ভারত-ভাগ্য-বিধাতা। ভারতকে পরাধীন রাখার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী রবার্ট ক্লাইভ কে ‘লর্ড’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করলেন ইংল্যান্ডের সরকার। তারপর মঞ্চে উপস্থিত হলেন, অপকর্ম বিশারদ ওয়ারেন হেস্টিংস। এই লোকটিই মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তার পেটোয়া বিচারক দিয়ে মহারাজা নন্দকুমারের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করিয়েছিলেন, অত্যাচার করেছিলেন অযোধ্যার বেগমের ওপর। তারপর একে একে এ রঙ্গমঞ্চে আসতে থাকলেন এক এক চরিত্র, লর্ড কর্নওয়ালিস, লর্ড ওয়েলেসলি, লর্ড আমহাস্ট, লর্ড বেন্টিঙ্ক, লর্ড অকল্যান্ড, লর্ড এলেনবরা, এবং লর্ড হার্ডিক। এদের নামগুলোকে চিরস্থায়ী করবার চেষ্টা করেছিল ইংরেজ সরকার, বলা ভালো রাইটার্স বিল্ডিং এর আধিকারিক গন। তাই তাদের নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল কলিকাতার বিভিন্ন রাস্তা এবং সেতু, ক্লাইভ ষ্ট্রীট, হেস্টিংস ষ্ট্রীট, কর্নওয়ালিস ষ্ট্রীট, ওয়েলেসলি ষ্ট্রীট, আমহাষ্ট ষ্ট্রীট, অকল্যান্ড রোড, হর্ডিক ব্রীজ ইত্যাদি।

এদের পরেই আসেন লর্ড ডালহৌসী। এই ভদ্রলোকের সম্পর্কে ইতিহাসের কোনো পাতা চুপ নেই। তার চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো তার উদ্ভাবনীশক্তি সংগঠন ক্ষমতা এবং কর্মদক্ষতা। তার সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি বহুচর্চিত, যাকে অবলম্বন করে ইংরেজ শাসন অনেক দূর নিজেদের শাসন বিস্তৃত করে, ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে তার প্রভাব দেখা যায়, তবুও এ যুদ্ধ যে মুক্তি যুদ্ধের প্রাথমিক পর্ব সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এহেন কীর্তিমান ব্যক্তিকে যে ইংরেজ সরকার যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, সেই সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ডালহৌসীর নামাঙ্কিত ডালহৌসীর স্কোয়ার।

তথ্যসূত্রঃ কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত – বিনয় ঘোষ

ছবিঃ কমনস উইকিমিডিয়া