গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
কলকাতা মানেই খাদ্য রসিকদের ঠেক। টক, ঝাল, নোনতা ও মিষ্টি সব মিলিয়ে সাজানো পাত ছাড়া তাদের চলে না। তাই খাবারের মধ্যে বাঙালিয়ানা থাকুক বা না থাকুক, খাদ্য প্রেমিদের কাছে খাওয়াটাই মূল লক্ষ্য। কলকাতার স্ট্রিট ফুডে শুধু বাঙালিরাই নয়, মজেছে সারা ভারত-সহ বিদেশি পর্যটকরাও।
কলকাতার মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লার জুরি মেলা ভার। শুধুমাত্র বাঙালি খাবারই নয় এখানে অলি গলিতে পাওয়া যায় চিনা, তিব্বতি ছাড়াও অন্যান্য বিদেশি খাবার। যেমন সুস্বাদু বিরিয়ানি থেকে শুরু করে নানা স্বাদের ফুচকা, রকমারি কাবাব, ডিম ও মাংসে ঠাসা রোল, সদ্য ভাজা ফিশ ফ্রাই, মুচমুচে কাটলেট-কবিরাজি, হিঙের কচুরি, চাউমিন, মোমো, গরম সুপ, মালাই, ইডলি, ধোসা, তেলেভাজা আরও কত কিছু! কি জিভে জল চলে এল তো? আসাটাই স্বাভাবিক!
কলকাতার স্ট্রিট ফুডের আস্তানা হিসাবে এমন কিছু জায়গার নাম উঠে আসে, যেখানকার খাবারগুলির স্বাদ এতটাই অপূর্ব যে একবার খেলে বার বার খেতে চাইবেন। তাহলে আর দের্ কিসের? চলুন জেনে নেওয়া যাক…
• প্রভেশ পানিপুরি – স্ট্রিট ফুডের তালিকায় প্রথমেই আসে ফুচকার নাম। ছোট থেকে বড় সকলেরই পছন্দের হল ফুচকা। আমরা সাধারণত পুদিনা বা তেঁতুল জলে ডোবানো টক-ঝাল ও দই ফুচকাই খেয়ে থাকি। তবে কিছু কিছু জায়গায় মিষ্টি ফুচকাও পাওয়া যায়। কিন্তু আলিপুর চত্বরের প্রভেশ পানিপুরিতে গেলে পেয়ে যাবেন হরেক রকম ফুচকার স্বাদ। ঘুগনি ফুচকা, আলুর দম ফুচকা, চকোলেট ফুচকা, ধোকলা ফুচকা, সেজোয়ান ফুচকা, বুলেট ফুচকা, রকেট ফুচকা, টম্যাটো ফুচকা ইত্যাদি।
• জাইকা ও কুসুম রোল – সুস্বাদু ও বিভিন্ন রকমের রোল খেতে হলে অবশ্যই যেতে হবে পার্ক স্ট্রিটে অবস্থিত ‘জাইকা’ ও ‘কুসুম’ নামক রোলের দোকানে। এখন বহু জায়গাতেই বিভিন্ন স্বাদের রোল পাওয়া গেলেও জাইকা ও কুসুমের রোলের স্বাদই আলাদা। নরম পরটার মধ্যে নানা ধরণের পুর ভরে তৈরি করা হয় এখানকার রোল।
• ডেকার্স লেন – কলকাতার অতি প্রাচীন ডেকার্স লেনে গেলেই দেখতে পাবেন সারি সারি খাবারের দোকান। বৈচিত্রময় বিভিন্ন খাবার পাবেন এখানে। সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার উপযুক্ত জায়গা। তবে এখানকার বিশেষত্ব হল কচুরি। এছাড়াও চাউমিন, মুরগি ভাজা, লুচি-আলুর দম, ফিশ রোল, ঘুগনি, ঝালমুড়ি, চিকেন স্টু ইত্যাদি।
• অনাদি কেবিন – এসপ্ল্যানেডের জওহরলাল নেহেরু রোডে অবস্থিত অনাদি কেবিন। কলকাতার এই প্রাচীন খাবারের দোকান মোগলাই ও কাটলেটের জন্য বিখ্যাত। কেবিনের কাছে আসলেই লোভনীয় গন্ধে জিভে জল আসতে বাধ্য। আর খাবারের স্বাদের জুরি নেই। খাদ্যরসিক হয়ে অনাদিতে না আসলেই হবে মিস!
• ওল্ড চায়না বাজার – লাল বাজারের পিছনেই পোদ্দার কোর্ট। তার গলি ধরে গেলেই সান ইয়াৎ সেন স্ট্রিট। সেন্ট্রাল মেট্রো থেকে বৌবাজারের দিকে মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটলেই ‘ওল্ড চায়না বাজার’। কলকাতায় থেকে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ খাবারের স্বাদ হলে এখানে আসতেই হবে। তবে সময়ের একটু বিধিনিষেধ রয়েছে। রবিবারের সকালে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮:৩০ টা পর্যন্ত চলে সেখানে চিনা খাবারের হাট। ‘অথেনটিক চাইনিক ব্রেকফাস্ট’ করতে চাইলে এখানে আসতেই হবে। আমরা সাধারণত যে ধরণের চাইনিজ খাবার খাই তার চাইতে এখানকার খাবার একেবারেই আলাদা। যদিও সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও বাজার বসে ঠিকই, তবে সপ্তাহন্তে রবিবার সে হাটের ভোল বদলে যায়। সুপ, মোমো, রোস্টেড ডাক, ডাম্পলিং সহ আরও অনেক কিছু পাওয়া যায়।
• গোলপার্ক ক্রসিং – কুড়মুড়ে ফিশ ফ্রাই ছাড়া বৃষ্টি ভেজা কলকাতার সন্ধ্যার আড্ডা জমে না। তাই টাটকা সুস্বাদু ফিশ ফ্রাই খেতে হলে পৌঁছে যেতে হবে গোলপার্ক ক্রসিং থেকে গড়িয়াহাটের দিকে। হাঁটা পথেই দেখতে পাবেন বহু ছোট ছোট ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। ওইসব দোকানের ফিশ ফ্রাই খেলে মুখে লেগে থাকবে সেই স্বাদ। এছাড়াও পাবেন মাখন দিয়ে ভাজা মাছ।
• ক্যামাক স্ট্রীট – কুলফি আমাদের সকলেরই প্রিয়। দুধের তৈরি এই মিষ্টি খাবার কে -না খেতে চায়। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কুলপি খেতে হলে চলে যান ক্যামাক স্ট্রীটে। সেখানকার ফ্রুট কুলফি কলকাতা বিখ্যাত। নানা রকমের ফল দিয়ে তৈরি হয় সেই কুলফি। যার স্বাদ ও রং দেখে আপনি আবাক হতে বাধ্য।
• রোস্টেড কার্ড – কসবা বকুলতলায় জে.কে টায়ার্সের ঠিক পাশেই আবস্থিত এই দোকানটি। এখানকার বিশেষত্ব হল কাবাব। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাবাবের প্রতি মানুষের প্রেম এক বিন্দুও কমেনি, বরং তার চাহিদা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। স্বল্প দামে হরেক রকম সুস্বাদু খাবার খেতে হলে হলে ঘুরে আসুন রোস্টেড কার্ড থেকে। ছোট দোকান হলেও স্বাদে টেক্কা দেবে বড় বড় দোকানকে।
কমেন্টস
I am interested in old, traditional and controversial events. Please let me know your story.