গল্প কুটির ওয়াব ডেস্ক|

আমরা জানি রাখি বন্ধন উৎসব এমন একটি উৎসব ভাই-বোনের মধ্যে পালিত হয়। প্রতিবছর রাখি পূর্ণিমার দিন বোন তার ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে তার মঙ্গল কামনা করে। ভাইও বোন কে রক্ষা করার শপথ নেয়। একে অপরকে মিষ্টিমুখ উপহার, আদান-প্রদান কোনকিছুই বাদ যায় না উৎসবের তালিকা থেকে। কিন্তু রাখি উৎসব শুধুমাত্র ভাই বোনের মধ্যেই নয়, পালিত হতো পুরাণেও। ইতিহাসের পাতায়ও রয়েছে রাখি উৎসব পালনের নজির। 

পুরাণে একসময় দেবতা ও রাক্ষস দের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। সেই যুদ্ধে দেবতাদের পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন দেবরাজ ইন্দ্র গুরু বৃহস্পতির কাছে পরামর্শের জন্য যান। দেবগুরু বৃহস্পতির পরামর্শে শ্রাবণ পূর্ণিমা দিন ইন্দ্রের স্ত্রী শচী তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন এবং দেবতারা যুদ্ধে জয়লাভ করেন। এছাড়াও যমের অমরত্বের প্রার্থনা করে তার বোন যমুনা তার হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। এবং যমরাজ ও বোনের হাতে রাখি পরিয়ে তাকে কথা দেন যে তিনি তাকে রক্ষা করবেন। 

মহাভারতের মতো মহাকাব্যের পাতাতেও পাই রাখির উল্লেখ। শোনা যায় যে গাছ রাজসূয় যজ্ঞের সময় কৃষ্ণ শিশুপালকে হত্যার পরে কৃষ্ণের হাতের আঙ্গুল কেটে যায়, রক্ত ঝরতে থাকে। তখন দ্রৌপদী নিজের শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দেন। কৃষ্ণ তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে সমস্ত রকম বিপদ থেকে কৃষ্ণ তাকে রক্ষা করবে। 

মতভেদে শোনা যায়, শ্রাবণ মাসে পূর্ণিমা দিনে হতদরিদ্র নারীর ছদ্মবেশে লক্ষী বালির কাছে আশ্রয় চান। বালি নিজের প্রাসাদের দরজা খুলে দেয় সেই হতদরিদ্র বালিকার জন্য। এতে লক্ষ্মী খুশি হয়ে এক টুকরো কাপড় বেঁধে দেন বালির হাতে। আবার গণেশের দুই ছেলে নাকি রাখি পড়ার জন্য আবদার করেছিল। তখন গণেশের দুই স্ত্রী ঋদ্ধি সিদ্ধি অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি সৃষ্টি করে সন্তোষীকে। তারপর সন্তোষী রাখি বাঁধে গণেশ পুত্রদের।  

পুরুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবেও তাদের হাতে রাখি বেঁধে দিতেন মহিলারা। ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার ও পুরুর যুদ্ধের পরেও রাখি বন্ধনের উদাহরণ পাওয়া যায়। স্বামীর প্রাণভয়ে আলেকজান্ডারের স্ত্রী পুরুর হাতে রাখি বেঁধে দেন। তার পরিবর্তে পুরু কথা দেন যে তিনি আলেকজান্ডারের কোন ক্ষতি করবেন না। 

ইতিহাস সাক্ষী আছে রাখি বন্ধনের,  চিতোরের রানী কর্মাবতী গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহের আক্রমণের খবর পেয়ে মোগল সম্রাট হুমায়ূনকে রাখি পাঠিয়ে সাহায্য চান। কিন্তু তাঁর আসতে দেরি হওয়ায় জওহর প্রথা পালন করে আগুনে ঝাঁপ দেয় কর্মাবতী।  

আরো এক সম্পূর্ণ অন্যরকম রাখি বন্ধনের ইতিহাস আমরা পাই। সেই রাখি বন্ধনের কথা মাথায় আসে  রবীন্দ্রনাথের।  ভাই বোনের নয়,  রাখি বন্ধন কে তিনি করে তুলেছিলেন হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির উৎসব।  

তথ্যসূত্র – ইন্ডিয়া টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ছবি – পিক্সাবে