গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

ভ্রমণ ভালোবাসেন না এমন ক’জন আছে বলুন তো! কাজের চাপে শ্রান্ত মন যখন বলে সব ছেড়ে পাড়ি দিই অন্য কোনো দেশে তখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় মস্তিস্ক। মনে করিয়ে দেয় বাকি কাজগুলোর কথা। তাই বলে কি ভ্রমণে ছেদ পড়লে হয়! ভ্রমণপিপাসুরা ঠিক কাজের মাঝেই বের করে ফেলেন সময়, ঘুরে বেড়ান এক শহর থেকে অন্য শহরে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে। আর তার জন্যই বছর জুড়ে চলে প্রস্তুতি, চলে সেভিংস। অজানাকে জানা, নতুন নতুন চমককে স্মৃতির বাক্সে পুরে ফেলতে কে না চায়! তবে জাপান এমন এক চমকপ্রদ উপহার দিল মানুষকে যা হয়তো মানুষ আগে কখনো ভাবতেও পারেনি।

ট্যুর প্ল্যানিং-এ অন্যান্য অনেক খরচের সাথে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে থাকার জায়গার খরচ। অর্থাৎ হোটেল বাবদ খরচ, তা আবার এলাহী আয়োজনযুক্ত হলে তো কথাই নেই! তরতর করে বাড়ে বাজেট। তবে জাপান কিন্তু এক অভিনব আয়োজন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। সেখানে এখনো রয়েছে ৬৬টাকায় হোটেল! হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন। সত্যিই জাপানে রয়েছে এমন এক হোটেল যেখানে রাত্রিবাস করলে প্রতি রাতের ভাড়াবাবদ দিতে হবে ১০০ইয়েন যার ভারতীয় মূল্য মাত্র ৬৬টাকা। বিস্ময়ের ঢোক গিলে এবার একটু বিস্তারে যাওয়া যাক! জাপানের এই বিশেষ হোটেলটির নাম আসাহি রোয়োকান। হোটেলের ৮ নম্বর ঘরে রাত্রিবাস বাবদ ধার্য করা হয়েছে অতি স্বল্পমূল্য। মজাটা অন্য জায়গায়। এই হোটেলের এই বিশেষ ঘরটিতে থাকতে গেলে পালন করতে হবে এক অদ্ভুত শর্ত। যে ব্যক্তি ঘরটিতে থাকবেন তাঁর সমস্ত কার্যকলাপ শর্তানুসারে ক্যামেরাবন্দি করা হবে। আর সেটি সরাসরি লাইভস্ট্রিম করা হবে হোটেলের ইউটিউব চ্যানেল ‘ওয়ান ডলার হোটেল’ (One Dollar Hotel)-এ।

জাপানি আদলে তৈরী ছিমছাম কামরাটিতে বিলাসিতার লেশমাত্র নেই। তবে প্রয়োজনের সঙ্গেও কোনো আপোষ নেই বটে! ঘরটিতে মিলবে একটি ফোল্ডেবল স্লিপিং ম্যাট, টিভি ও একটি ছোট কফি টেবিল। সাথে ঘরের ঠিক মাঝখানে থাকবে একটি ক্যামেরা, যেটি এমন একটি অ্যাঙ্গেলে বসানো থাকবে যেখান থেকে ঘরের পুরো অংশটা দেখা যাবে। থাকবে না কোনো ব্লাইন্ড স্পট। অবশ্য একটা স্বাধীনতা পাবেন কামরায় থাকা মানুষ, ঘুমোনোর সময় আলো বন্ধ করার সুবিধা। বাথরুম থাকবে ঘরটির পাশে যেখানে ক্যামেরার নাগাল পৌঁছনোর কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। যেহেতু সিসিটিভি-র মাধ্যমে রেকর্ডিং হবে তাই সেখানে কোনো ব্যক্তিগত কথা কারুর জানার কোনো উপায় নেই। তাই কথা বলার হলে নিশ্চিন্তে তা করতেই পারেন তাঁরা। এই পুরো বিষয়টি শুনে আমাদের অতি পরিচিত এক রিয়্যালিটি শো-র কথা মাথায় আসছে না? নামটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখে অভ্যস্ত তার অভিজ্ঞতা নিজেরাও করতে পারেন। এই থ্রিলিং চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করতে চাইবেন কি? আর তাও ভ্ৰমণ করতে গিয়ে এরকম একটা অপশন যখন হয় সাশ্রয়ী! 

হোটেলটির  মালিক ২৭ বছর বয়সী টেটসুয়া ইনইয়ু। তাঁর মাথায় এই ধরণের ধারণা প্রথম আসে তাঁর হোটেলে আসা এক ইউটিউবারকে দেখে। তিনি এখানে থাকাকালীন তাঁর সমস্ত গতিবিধি লাইভস্ট্রিম করেন। তা দেখে নিজের হোটেলে এরকম একটা আলাদা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা তিনি করেন। হোটেলটি তাঁর ঠাকুমার, স্বাভাবিকভাবেই এটি বেশ পুরানো। ফলে আলাদা করে প্রচারের কথা কেউ কখনো ভাবেনি, তাই নিজেই এই অভিনব ব্যবস্থার মাধ্যমে অলোচনার বিষয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যাতে তাঁর এই হোটেল মানুষের চর্চার বিষয় হতে পারে। তাঁর এই পরিকল্পনাকে পরখ করে দেখতে, উপলব্ধ করতে হাজিরও হয়েছেন অনেকেই।

ছবি: প্রতীকী, সূত্র: পিক্সঅ্যাবে
লেখা তথ্যসূত্রঃ সিএনএন, এনডিটিভি ও ইউটিউব