গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

পাহাড়ের কোলে সবুজের গালিচায় মোড়া কেরলের এক ছোট্ট শহর হল মুন্নার। ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য এ এক নতুন ঠিকানা। মুন্নারকে বলা হয় ভারতের দ্বিতীয় কাশ্মীর। কেরলার বুকে আবস্থিত শৈল শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাজানো যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতে অবস্থিত মুন্নার শৈল শহর হিসেবে পরিচিত।এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামার সময় আপনার সঙ্গী হতে পারে নদী, অরণ্য, সবুজ চা বাগান ও জলপ্রপাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই শহরটি। নির্জন,শান্ত, সবুজে ঘেরা পাহাড়ি পথ। মুন্নার গড়ে উঠেছে কেরলের তিনটি নদী মুথিরাপুরা, কুন্ডলা এবং নল্লাথান্নির সংযোগস্থলে।

দু’চোখ যেদিকেই যাবে চোখে পড়বে সারি সারি চায়ের বাগান ও নদী। যা দেখে চোখের শান্তির পাশাপাশি মন হয়ে উঠবে ফুরফুরে। পথ চলতে দেখা মিলবে কৃত্তিম লেকও। আর পাহাড়ি এলাকা মানেই মেঘ-রোদ্দুরের খেলা। শোনা যায় ব্রিটিশ আমলে এই মুন্নার শহরেই গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন করতেন। এর জন্য তারা শহরটিকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। সেই থেকেই মুন্নার রিসর্ট টাউন হিসেবে পরিচিতি।সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি মুন্নারের আবহাওয়াও বেশ বৈচিত্রপূর্ণ। এখানে ভোরবেলা যেমন হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা থাকে, ঠিক তেমনই দুপুরবেলা মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা। রাতে কখনও এক ফালি চাঁদ আবার কখনও রিমঝিম বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে একটি মায়াবী পরিবেশ।

কী? এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবুজ চা বাগানে হারিয়ে গিয়েছেন আপনি! দিবা স্বপ্নে না ভেসে বাস্তবেই ঘুরে আসুন ‘দক্ষিণ ভারতের কাশ্মীর’ হিসাবে পরিচিত মুন্নার থেকে। আর সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনি যে সত্যিই হারাবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

কী কী দেখবেন এখানে –

• টাটা টি মিউজিয়াম- মুন্নারের জনপ্রিয় একটি টি ভ্যালি হল টাটা টি মিউজিয়াম। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পাহাড়ের গায়ে সবুজ কার্পেট বিছানো রয়েছে। চা চাষ করা থেকে শুরু করে প্রসেস করা, সবের দেখা মিলবে এখানে।

• টপ স্টেশন ভিউ পয়েন্ট – মুন্নারের সর্বোচ্চ ভিউ পয়েন্ট এটি। এখান যেতে হলে মুন্নার থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। তারপর বেশ কিছুটা পথ সিঁড়ি বেঁয়ে এখানে পৌঁছাতে হবে। কোদাইকানাল রোডের উপর প্রায় ৬,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ভিউ পয়েন্টটি। এখানে দাঁড়িয়ে যেদিকেই তাকাবেন সবুজ পাহাড় ঘেরা ভূমিরূপ নজরে আসবে।

• মাততুপেট্টি ড্যাম – মুন্নার থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ড্যাম। মুদ্রাপূজা ও নাল্লাথনি কুন্ডলা নদীর সংযোগ হল এই লেক। মাততুপেট্টি ড্যাম এবং লেক পর্যটকদের একটি আকর্ষণীয় স্থান।

• ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক – শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই উদ্যান। এই উদ্যান বিরল প্রজাতির প্রাণী নীলগিরির জন্য বেশ বিখ্যাত। এখানেই দেখা মেলে নীলকুরিঞ্জি ফুল। ফুলটি ১২ বছরে মাত্র একবারই ফোটে। সারা পাহাড় তখন ঢেকে যায় হালকা বেগুনি রঙে। সব মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য। এছাড়া এই উদ্যানে রয়েছে ইরাভিকুলাম জলপ্রপাত।

• এছাড়া দেবীকুলম, আনাইরাঙ্গাল ড্যাম, ইকো পয়েন্ট, বলুজম পার্ক, কলারিপাত্তু ইত্যাদি স্থানও বেশ জনপ্রিয়। প্রকৃতির বুকে সবুজ, শান্ত, সুন্দর পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে হলে ঘুরে আসতে পারেন কেরালার মুন্নার থেকে। কাশ্মীর যেমন ভূস্বর্গ। ঠিক তেমনই কেরলের বুকে একটি ছোট্ট কাশ্মীর হল মুন্নার।