গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
চারিদিকে নানান রকমের মতামত-বক্তব্যের ঝড়, কেউ বলছেন যে প্রকৃতিমাতা নিজের দায়িত্বে সুস্থ করছে নিজেকে, কমছে দূষণ। আবার কেউ বলছেন কারফিউ-এর জেরে শহরের বুকেও সকালবেলায় শোনা যাচ্ছে নানা পাখির আওয়াজ, অর্থাৎ যানবাহনের কর্কশ শব্দ থেকে মুক্তি। কয়েকদিন আগেও এই বায়ুদূষণের অস্বাভাবিক মাত্রাবৃদ্ধি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল পরিবেশবিদ তথা প্রতিটি দেশবাসীর কপালে। সমস্যা জানা ছিল সকলের, কিন্তু ছিল না সমাধানের স্পৃহা। ফলে ক্ষত হচ্ছিল গভীরতর। বর্তমানে করোনা আতঙ্কের পরিস্থিতি পাল্টে দিল সেই লাগামছাড়া দূষণের রূপ। কেন্দ্র সরকারের চোদ্দ ঘন্টার ‘জনতা কারফিউ’- এর সিদ্ধান্ত একদিনে এক ধাক্কায় কমিয়ে দিল দূষণের হার, শহরজুড়ে তো বটেই এমনকি দেশ জুড়ে।
দেশের নিরিখে শ্বাসবাহিত ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ যেখানে ৬০মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার পর্যন্ত নিরাপদ সেখানে ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী গত শীতে দিল্লিতে ছিল ৪৬৭ ও কলকাতার ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে ছিল ২১৫। এটি পরিবেশবিদদের উত্তেজনার কারণ হয়েছিল বেশ। অপরদিকে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশন বা হু-এর তথ্য অনুযায়ী যে কোনো শহরকে সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত রাখতে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমান হওয়া উচিত ঘনমিটার প্রতি ২৫মাইক্রোগ্রাম। এই জনতা কারফিউ-এর ফলে পরিসংখ্যানে আসে অপ্রত্যাশিত বদল। গত ২২শে মার্চ, ঘড়ির কাঁটায় দিনটি যখন শুরু হয় তখন দিল্লিতে এই পরিমাণ ছিল ২৩৪, গোটা দিনের শেষে তা দাঁড়ায় ১৮৭ এবং ক্রমশ তা কমছে। তিলোত্তমার চিত্রও ঠিক একই, পরিমাণ শতোর্ধ থেকে কমে এসে পৌঁছোয় ষাট-সত্তরের কাছাকছি। দেশের অন্য মেট্রোপলিটন শহরে বেশিরভাগই রয়েছে পঞ্চাশ-সত্তরের আশেপাশে। কিছু ক্ষেত্রে গ্রাফ নেমেছে চল্লিশেও।
প্রধানমন্ত্রীর কারফিউ-র ডাকে সমর্থন করে রবিবার রাস্তাঘাট ছিল মোটামুটি জনশূণ্য। শহুরে ব্যস্ততা, যান্ত্রিকতায় পড়ে ছেদ। ফলে প্রকৃতি সুযোগ পায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার। চল্লিশ ডেসিবেলের নিচে শব্দদূষণের মাত্রা থাকলে সাইলেন্স জোন বলা হয়ে থাকে, আজ নগর কলকাতার সারা দিনে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় ছিল না হর্নের আওয়াজ, মাত্রা ছিল চল্লিশ ডেসিবেল। এমন অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনে যেমন আশ্বস্ত দেশ, ততোধিক খুশি দেশবাসী। লকডাউন পিরিয়ডে দূষণমুক্তির পরিমাপ বাড়বে বলেই আশা পরিবেশবিদদের।
জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড উত্পাদিত হয় এবং তাই গাড়ি, ট্রাক, বাস, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য শিল্পাঞ্চল থেকে তা উদ্ভূত হয়। নাসার কয়েক সপ্তাহ আগের রিপোর্ট অনুযায়ী বিপুল পরিমাণ হ্রাস পায় চীনের নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড-এর হার কারণ দেশের অধিকাংশ অংশ লকডাউনে ছিল। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-র মিশন ম্যানেজার ক্লজ জেহনার জানান এই হার এক লাফে ৪০% কমেছে চীনে। এখন দেখা যাচ্ছে এই একই প্রক্রিয়া ইতালির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যে দেশে চীনের বাইরে সর্বাধিক সংখ্যক কোভিড -১৯ আক্রান্তের সংখ্যা রয়েছে। সেখানে সপ্তাহ প্রতি ১০% কমেছে বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড-এর পরিমাণ গত পাঁচ সপ্তাহে। লকডাউনের জন্য এক নিমেষে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে কমছে দূষণ। বদলাচ্ছে প্রকৃতির চিত্র। আর আমাদের শহর কলকাতার বর্তমান পরিস্থিতিও অভিন্ন।
ছবিঃ পিক্সাবে