গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।
নারী নিজেই পারে নিজের ভাগ্যকে জয় করতে। সে ক্ষমতা তার রয়েছে। তেমনই কিছু নারীরা একত্রিত হয়ে পাট দিয়ে বিভিন্ন রকমের হস্তশিল্পের কাজ করে নিজেদের অন্নসংস্থান করছেন। জীবন যুদ্ধে তারা আজ জয়ী। যে অর্থ তারা উপার্জন করেন তা হয়তো খুবই সামান্য। কিন্তু সেই অল্প উপার্জনেই তারা খুশি। খুব সহজেই কারোর কাছে হাত পেতে না দিয়ে ‘আমি পারবো’ এই আত্মবিশ্বাসের বাণীতে তারা উজ্জ্বল এবং স্বতন্ত্র।
আজমিরা, ২০১৭ সালে সন্তান জন্ম দেবার সময় তার ডান পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে। একে পঙ্গু বৌ তার উপর আবার জন্ম দিয়েছে কন্যা সন্তান। এমন বউকে তালাক দিতে দেরি করেনা স্বামী। গরিব বাপের বাড়িতেও তাঁর ঠাঁই হয় না। মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। বাড়ির পাশেই মনসুরা জুট হ্যান্ডিক্র্যাফ্টস নামের একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে কাজ পায় সে। ছোটবেলা থেকেই পাট দিয়ে ঘর গেরস্থালির বিভিন্ন রকম জিনিস বানানোর অভিজ্ঞতা ছিল তার। সেই অভিজ্ঞতাই কাজে লাগে এই কাজে। এই প্রতিষ্ঠানে তাকে রোজ যেতে হয় না। বাড়িতে বসেই পাট দিয়ে সে শতরঞ্চি বানায়। তৈরি করে নানারকম পাটজাত পণ্য। মাসে তার আয় বারোশো টাকা। এই দিয়েই সে স্বপ্ন দেখে তার মেয়েটাকে মানুষ করার। ইতিমধ্যেই সে পাটজাত পণ্য বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আজমিরার কণ্ঠেও আত্মবিশ্বাসের সুর। আজমিরা যেন প্রতিদিনই স্বপ্ন বুনে চলেছে তার পাটের বুননে।
আজমিরার মতই আরো একজন মাহফুজা। কুড়ি বছর বয়সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সে। প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে কাজ করে সে। তার মাসিক আয় ৩০০০ টাকা। গরিব বাবা মায়ের সন্তান সে। তাই তাকে খুব অল্প বয়সেই বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে নিত্য অভাব-অনটন সহ্য করতে না পেরে পাটপণ্য জাত কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু হয় তার জীবন বদলের গল্প। এখন সে সংসারে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে আবার পড়াশুনাও চালায় নিজের। স্বপ্নকে সত্যি করার লক্ষ্যে অবিচল মাহফুজা।
হালিমা খাতুন, আছির উদ্দিন জুট প্রোডাক্টসে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সংসারের অভাব টানতে না পেরে এই মধ্যবয়সী মহিলা নিজেই সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের কাঁধে।
এমন অনেক আজমিরা, মাহফুজা রা ছড়িয়ে আছে এই দেশে। যাদেরকে পেটের ভাত যোগাতে সাহায্য করছে এই পাটের পণ্য। তাদের নিজেদের ইচ্ছে শক্তি এবং কর্মদক্ষতার মিশেলে পাটের বুননে তৈরি হচ্ছে অসাধারন শিল্পকর্ম, যা ছড়িয়ে পড়ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।
তথ্যসূত্র – বিডিনিউজ
ছবি – পিক্সাবে