গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

প্রকৃতি যখন রুষ্ট হন মানবসভ্যতা তখন অকেজো-অসহায়। প্রযুক্তি-বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আপন খেয়ালে চলে প্রকৃতির ধ্বংসলীলা। ঝাঁপ পড়ে অত্যাধুনিক জীবন যাপনের। ঠিক এরকমই একটা পরিস্থিতিতে এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে মানবজাতি। কিন্তু এই অবস্থার পিছনে সত্যিই কি রয়েছে প্রকৃতির ক্ষুব্ধতা! নাকি মাঝে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে যা এড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর নজর।

করোনার জেরে আজ পৃথিবীর সর্বত্র থেমে গেছে জনজীবন। বড় শহরগুলি একেবারে বন্ধ, স্টকমার্কেটে অস্বাভাবিক পতন দেখা দিয়েছে। চীনের উহান শহরে উৎপত্তি এই করোনা ভাইরাসের যার আতংকে কাঁপছে জাতি-ধর্ম-অর্থ-ক্ষমতা নির্বিশেষে সকলে। এক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এই মারণ ভাইরাস পৌঁচেছে অন্য সীমান্তে, কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। কিন্তু এই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ চীন কিন্তু ইতিমধ্যেই ফিরছে তার স্বাভাবিক ছন্দে। সেখানে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫,৭০০ মানুষ এখন সুস্থ। এমনকি চীনে এখন তুলে নেওয়া হচ্ছে বাধানিষেধ। বেশ কিছু জায়গায় খুলে দেওয়া হয়েছে কারখানা, এক নতুন সূচনার মুখ তারা দেখতে পাচ্ছে ইতিমধ্যেই। যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণে অবশ্যই সময় লাগবে কিন্তু শুরু  স্বাভাবিকের পথে এগোনো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য চাইনিস কোম্পানিগুলি এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী অর্থাৎ মাস্ক, গ্লাভ্স, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির যোগান বাড়াতে কারখানায় তৈরী করছে এগুলি। খুলে গেছে রেস্তোরাঁ, চিড়িয়াখানা, এমনকি পর্যটকদের জন্য খুলেছে চীনের প্রাচীর যদিও ভিনদেশীর অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে চীনে বসবাসকারী বহু মানুষ এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে, প্রাণ গেছে বহু। কিন্তু যে সময় তা মহামারির আকার নিতে শুরু করেছিল তার বহু আগে থেকেই ছড়িয়েছিল এই রোগ, বলে ধারণা চিকিৎসকদের। এই সম্পর্কে কি তারা ওয়াকিবহাল ছিল না! পৃথিবীর উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকা সত্বেও ইতালি জুড়ে যখন চলছে মৃত্যুমিছিল তখন খুব সহজেই চীন ফিরছে তার স্বাভাবিক জীবনে। শুধু তাই নয় অর্থনীতির ক্ষত নিরাময়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে রিলিফ প্যাকেজ, চীনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং জিয়াওলং-এর কথায় চাইনিজ ইকোনমি স্বাভাবিক হচ্ছে ক্রমশ। পৃথিবীর প্রতি দেশে যখন চলছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই তখন চীন শুরু করে দিয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য।

বিশ্বের দুর্গমতম এলাকায় যেখানে পৌঁছে গেছে এই মারণ ভাইরাস অথচ বিশেষ আঁচ পড়েনি  চীনের বড় ও উল্লেখযোগ্য শহরগুলিতে। চীনের বিখ্যাত শহর বেজিং যেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬৯ ও মৃতের সংখ্যা ৮ সেই শহরের মোট জনসংখ্যা ২.১৫কোটি। ঠিক একই চিত্র সাংহাইতেও যা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দশ শহরের একটি, যেখানে জনসংখ্যা ২.৪কোটি সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫জনের, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৮। অর্থাৎ চীনের মূল আর্থিক কেন্দ্রগুলি এই ক্রাইসিস পিরিয়ডেও খুব সহজেই ফিরে এলো আগের পর্যায়ে, পুরো দোমে শুরু করল ব্যবসা-বাণিজ্য। ২০২০-র প্রথম দুই মাসেই প্রায় ৯০০০ চাইনিজ কোম্পানি মাস্ক উৎপন্ন করতে শুরু করল, দিনে প্রায় ১১৬ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে উৎপাদিত মাস্কের সংখ্যা। ডন পলিমার- কোম্পানিটি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সমস্ত বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত উদ্যোগগুলি ৮০% কর্মচারী রিটার্ন হার এবং ৭০% ব্যবসায়িক পুনঃস্থাপনের হার নিয়ে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে।

যে চীনের ভাইরাসে আজ জর্জরিত সমগ্র বিশ্ব সেই পরিস্থিতিতে চীন করে তুলছে নিজেকে সুস্থ এবং পৃথিবীকে সুস্থ করার উদ্দেশ্যে করছে বাণিজ্য। এই ধাক্কা সামলে যতদিনে সমস্ত দেশ উঠে দাঁড়াবে ততদিনে চীন এগিয়ে গেছে অনেকটাই। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে দুই চাইনিজ জেনারেলের মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি-র উপর লেখা একটি বই ‘আনরেস্ট্রিক্টেড ওয়ারফেয়ার, চায়নাস মাস্টারপ্ল্যান টু ডেস্ট্রয় আমেরিকা’- যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘাতে চীন কখনো আমেরিকাকে হারাতে পারবে না, তাই এগোতে গেলে লক্ষ্য হবে অর্থনীতির ক্ষয়সাধন। প্রসঙ্গ উঠছে বিভিন্ন কন্সপিরেসি থিওরিস্ট-এর তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে। এই পরিস্থিতি বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে দাঁড় করিয়েছে এক বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

ছবিঃ পিক্সাবে