গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
কম্পিউটার ব্যবহার করতেন গেম খেলার জন্য, নিজের চেষ্টায় এখন তিনি ওয়েবসাইট ডিজাইনার। মাত্র ২২ বছর বয়সেই দেশ-বিদেশ জুড়ে কোটি টাকার ব্যবসা চালাচ্ছেন এই ভারতীয় যুবক। নাম হুসেন সইফি।মধ্যপ্রদেশের ভোপালের বাসিন্দা হুসেন। ১২ বছর বয়সে হুসেনকে একটি কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। ছেলেকে কম্পিউটার বিশারদ বানানোর ইচ্ছায় বাড়িতে কম্পিউটারটি আনলেও হুসেন সেটা ব্যবহার করতো একটি গেমিং মেশিন হিসাবে।
গেমিং এতটাই প্রিয় ছিল হুসেনের, যে সেই ছোট্ট বয়য় থেকেই তাঁর জানার কৌতূহল জাগে গেম বানানো হয় কীভাবে? সেই থেকেই শুরু তাঁর ওয়েবসাইট নিয়ে জানার আগ্রহ। তবে এই পড়াশোনা সে কোনও ইনস্টিটিউট বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে করেননি। কারণ তার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক টাকার। আর বাবার কাছ থেকে তিনি সেই টাকা চাইতেও পারেননি।
এক্ষেত্রে কিছুটা সাহায্য করে হুসেনের স্কুল। ওই সময় স্কুলের কম্পিউটার ক্লাসে শুরু হয় ওয়েবসাইট বানানোর প্রশিক্ষণ। সেখান থেকে ওয়েবসাইট সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পায় সে। তারপর ঠিক করলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবেন। কিন্তু বাড়িতে ছিলনা ইন্টারনেট পরিষেবা। তাই সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে শুরু করেন। ইউটিউব ও বিভিন্ন ওয়েব সাইট ঘেঁটে, অনলাইন প্রশিক্ষণের সাহায্যে শিখে ফেলেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও কোডিংয়ের খুঁটিনাটি।
এরপর তিনি নিজের বাড়িতেই একটি স্টার্ট আপ শুকরু করেন। প্রথমে ওয়েবসাইট ডিজাইনিংয়ের একটি সফটওয়্যার ইন্সটল করেন নিজের কম্পিউটারে। ব্যক্তিগত ওয়েব ডিজাইনিং সাইট খোলার যাবতীয় খুঁটিনাটি অনলাইনে শিখে নিয়েছিলেন তিনি। কপিরাইটের সমস্যা যাতে না হয় তার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। এভাবেই শুরু হয় তাঁর ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ। বর্তমানে তাঁর এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে জাপান, দুবাই ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিতে।
পুরো বিষয়টি গল্পের মতো সহজ-সরল শুনতে লাগলেও, বাস্তবটি ছিল ততটাই কঠিন। শুরুর দিকে সাফল্য না আসলেও চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন হুসেন। এরপর ইউটিউবে প্রোগ্রামিং টিউটোরিয়াল নিয়ে একটি চ্যানেল খোলেন তিনি। কিছু দিনের মধ্যে সেই চ্যানেলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে হুসেন ভোপালের একটি বার্গার সংস্থা থেকে ৫০,০০০ টাকার বিনিময়ে একটি ওয়েবসাইট বানানোর আবেদন পান। সেই প্রাপ্ত টাকাকে কাজে লাগিয়ে তিনি একটা ডোমেইন কেনার পাশাপাশি বাড়িতে ইন্টারনেট কানেকশন নেন।
স্কুল পাশের পর বিসিএ নিয়ে পড়ছিলেন হুসেন। তার পাশাপাশি চালিয়ে যেতেন নিজের ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ। সেই থেকে মাস গেলে আয় করতেন ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা। তবে পড়াশোনা ও ব্যবসা একই সাথে চালাতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েন তিনি। এই দুটির মধ্যে তিনি ব্যবসাকেই বেঁছে নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে হুসেনের কাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সারা ভোপালে। এই কাজে হুসেনের সঙ্গে যোগ দেন তাঁর দুই বন্ধু হৃত্বিক সোনি ও যশ দাবি। হুসেনের মতো ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে তাদের পড়াশোনাও অনলাইনেই।
এর ৩ বছর পর, হুসেনের সংস্থা একটি বড় অফিস কেনে। বহু কর্মচারি নিয়োগ করেন তাঁরা। বর্তমানে হুসেনের সংস্থায় কাজ করেন প্রায় ২৫ জন ইঞ্জিনিয়ার। এছারাও ফাস্ট২এসএমএস ও জিংফির মতো প্রায় দুশোটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন তাঁরা। হুসেনের সংস্থাটি এখন দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে পা রেখেছে বিদেশে।