কল্লোল মুখার্জী

১৮৫২ সালে ভারতের সিন্ধুপ্রদেশের কমিশনার বার্টল ফ্রেয়ার আগাম ডাক শুল্ক নেওয়ার জন্য ভারতে প্রথম ডাকটিকিটের প্রচলন করেন। ডাকটিকিট গুলির নাম ছিল ‘সিন্ডে ডকস্’। শুধু ভারতে নয়, এশিয়াতেও ডাকটিকিটের ব‍্যবহার ছিল এই প্রথম। তবে ম‍্যাড়ম‍্যাড়ে কাগজে ছাপা হওয়ায় তা চলেনি বেশিদিন। এরপর কলকাতা টাঁকশালের ‘সিংহ ও খেজুর গাছ’ দিয়ে সর্বভারতীয় ডাকটিকিটের প্রচলনের কথা ভাবা হয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি।

এরপর ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক‍্যাপ্টেন ‘থুইলিয়ারের’ অদম‍্য চেষ্টায় ছাপা হয় প্রথম সর্বভারতীয় ডাকটিকিট। এই ডাকটিকিট ছিল আধ আনা দামের, রঙ নীল, ছবি ছিল মহারাণী ভিক্টোরিয়ার। পরে এক আনা, দু আনা ও চার আনার ডাকটিকিটও ছাপা হয়। আধ আনা দামের ডাকটিকিটের নাম ছিল ‘নাইন এন্ড হাফ আর্চ’। ১৮৫৬ থেকে ১৯২৬ পর্যন্ত ভারতে ডাকটিকিট ছাপার ভার ছিল লন্ডনের ‘মেসার্স টমাস দ‍্য লা রু অ্যান্ড কোম্পানির’ উপর। এইসময় রাজা বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে লাগল ডাকটিকিটের নক্সাও।

১৯২৬ থেকে ডাকটিকিট ছাপার যাবতীয় দায়িত্ব পরল নবনির্মিত নাসিকের সরকারি প্রেসের উপর। ১৯৩১ সালে নতুন দিল্লির উদ্বোধন উপলক্ষে রাজার ছবি বাদ দিয়ে প্রথম দৃশ্যের ছবি ছাপা হল ডাকটিকিটে। তাতে ফুটে উঠল দিল্লির বিভিন্ন সৌধ ও জায়গার ছবি। এরপর ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু রকমের স্মারক ডাকটিকিট ছাপা হতে শুরু হয়। যাতে ফুটে উঠতে শুরু করে ভারতের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক। ডাকটিকিটে স্থান পায় আমাদের দেশের জীবজন্তু থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শিক্ষাবিদ ইত‍্যাদি দের ছবি।

ডাকটিকিটকে আরও আকর্ষণীয় তোলার জন্য ১৯৭২ সালে নানান রঙে ছাপার মেসিন বসানো হয় নাসিকের ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসে। ভারতের লঘুচিত্র, নাচের ভঙ্গী ইত্যাদি ছেপে বার হওয়া শুরু হয়। ভারতের ডাকটিকিটের ইতিহাসে যা স্মরণীয় ঘটনা। ডাকটিকিটের ইতিহাসে আরও একটি মনে রাখার মতো একটি ঘটনা হল ১৯১১-এর ১৮ই ফেব্রুয়ারি। এদিনই প্রথম চিঠি ও পোষ্টকার্ড উড়োজাহাজ করে নিয়ে যাওয়া হয় বিলি করতে। এই ব‍্যবস্থা সমগ্র বিশ্বের মধ্যে ভারতেই প্রথম।

তথ‍্য সূত্র: ডাকটিকিটের মজার কাহিনি, সত‍্যপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।