কল্লোল মুখার্জী
প্রাচীনকালের কোনো লিখিত ইতিহাস না থাকায় ভারতবর্ষের অতি-পূর্বতন ইতিহাস বিস্মৃতিরূপ ঘোর অন্ধকারে আবৃত। বেদ, পুরাণাদিতে যা পাওয়া যায়, তা থেকেই যৎকিঞ্চিত অনুমিত হয় মাত্র। সর্বাগ্রে আর্যরা সরস্বতী ও দৃষদ্বতী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে ব্রহ্মাবর্ত নামে একটি দেশ পত্তন করেন। ব্রহ্মার পুত্র স্বায়ম্ভুব মনু ও প্রজাপতিগণ ছিলেন প্রথম ব্রহ্মাবর্তবাসী। সায়ম্ভুব মন্বাদি মন্বন্তরের সপ্তম মনু হলেন ‘বৈবস্বত মনু’। এনার নয় পুত্রের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ‘ইক্ষ্বাকু’, অন্যদিকে তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যার নাম ‘ইলা’।
ইলা ও চন্দ্র-নন্দন বুধের মিলনই চন্দ্রবংশ বিস্তারের কারণ। বুধের ঔরসে ইলার গর্ভে পুরূরবার জন্ম হয়। যিনি ছিলেন চন্দ্রবংশীয় রাজাদের পূর্বপুরুষ। তাঁর আয়ু, মায়ু ইত্যাদি সাত পুত্র ছিলেন। আয়ুর পুত্র লোকবিখ্যাত নহুষ। নহুষ ছিলেন ইন্দ্রতুল্য ছয় তেজস্বী পুত্রের জনক। ছয় পুত্রের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যযাতি। যযাতি মহর্ষি শুক্রাচার্যের কন্যা দেবযানীকে বিবাহ করেন। দেবযানীর গর্ভে জন্ম হয় যদু ও তুর্বসু। এই যদু থেকেই যাদব বংশের জন্ম। যে বংশের বংশধর ছিলেন পরমাত্মা বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ।
যদু থেকে ক্রোষ্টুনীল, বৃজিবান্ ক্রমে ৩৬ প্রজন্মের পর রাজা হন ‘সাত্ত্বত’। এই সাত্ত্বত থেকে একদিকে বৃষ্ণি ক্রমে ১২ প্রজন্ম পর সুরসেনের পুত্র রূপে জন্ম নেন বসুদেব ও অন্যদিকে অন্ধক ক্রমে ১২ প্রজন্ম পর দেবকের কন্যা রূপে জন্ম নেন দেবকী। বসুদেব ও দেবকীর বিবাহ হয়। জন্ম নেন শ্রীকৃষ্ণ।
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন, তিনি তাঁর ইচ্ছায় আবির্ভূত হন, তাঁর জন্ম-কর্ম সবই দিব্য। তাই তত্ত্বগত ভাবে তাঁর জন্মলীলা জানার চেষ্টা না করে, তাঁর বংশপরিচয় কিছুটা জানানোর চেষ্টা করলাম।
তথ্য সূত্র: লিঙ্গ পুরাণ, শ্রীমদ্ ভাগবত।
ছবি ঋণ: পিক্সাবে।