গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

কোভিড-১৯ অতিমারির দাপটে মানুষের পরিচয় ঘটেছে কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন প্রভৃতি বিষয়গুলির সঙ্গে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে দূরত্ব মেনে নিজেকে এবং অন্যদের সুস্থ রাখা সম্ভব তা আমরা আট থেকে আশি সকলেই জেনেছি। আবার লকডাউন চলাকালীন দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকতেও বাধ্য হয়েছি। এই সবকিছু আমাদের কাছে খুব নতুন হলেও এটাই প্রথম নয়। আজ থেকে প্রায় ৩৫৬ বছর আগেও গৃহবন্দি হয়েছিল আস্ত একটা গ্রাম!

ইংল্যান্ডের ইয়াম নামক একটি ছোট্ট গ্রাম প্লেগের সংক্রমণ রুখতে করতে গৃহবন্দি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মহামারির জেরে ওই গ্রামে নাম হয়েছিল ‘প্লেগ গ্রাম’! গ্রামের মানুষরা মহামারি প্লেগ রুখতে রাতারাতি নিজেদের গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাহ্যিক জগত থেকে নিজদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরবর্তীকালে তারা সফল হয় এবং সাধারণ জীবনযাপনে পুনরায় ফিরে আসে।

সাল ১৬৬৫, মহামারি গ্রাস করে ইয়াম। গ্রামটি পিক ডিসট্রিক জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত হওয়ার দরুন জনসংখ্যাও কম। বিবিসির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঐতিহাসিকদের অনুমান মহামারি শুরুর আগে ইয়ামের মোট জনসংখ্যা ছিল ৩০০ থেকে ৮০০ জনের মধ্যে। এখন প্রশ্ন হল, এরকম একটি গ্রামে মহামারি হানা দিলো কীভাবে? জানা যায়, ইয়ামের বাসিন্দা জর্জ ভিকারস নামক এক দর্জি ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে লন্ডন শহর থেকে বেশ কিছু কাপড় নিয়ে এসেছিলেন গ্রামে। তার সপ্তাখানেকের মধ্যেই মৃত্যু তাণ্ডব শুরু হয় গ্রামে। প্রথমেই প্রাণ হারান সেই দর্জি এবং তার পরিবারের বহু সদস্য, একে একে সারা গ্রামে ছেয়ে যায় সংক্রমণ। লন্ডন থেকে আনা ওই কাপড়গুলির সঙ্গেই ইয়ামে ঢুকেছিল প্লেগের ভাইরাস।

ওই সময় শুধু ইয়াম নয়, বিশ্বব্যাপী অতিমারির আকার ধারণ করেছিল প্লেগ। ইয়ামের গ্রাম প্রধান উইলিয়াম মমপেসনস তাই দেরি না করে রাতারাতিই গ্রামে লকডাউন জারি করেন। বিচ্ছিন্ন হয় আশেপাশের গ্রামগুলি সঙ্গে সম্পর্ক। গ্রামের বাইরে থেকে যেমন কেউকে ইয়ামে ঢুকতে দেওয়া হতো না, তেমন ইয়াম থেকে বেরনোও নিষেধ ছিল। মহামারির সংক্রমণ রুখতে গ্রামবাসীরাও মেনে চলতেন সেই নির্দেশ।

বিবিসির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ইয়ামে মোট ২৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল প্লেগে, যা ওই গ্রামের মোট জনসংখ্যার ৭৫%। ওই পরিস্থিতিতে নিজের পরিবারে কারোর মৃত্যু হলে নিজের হাতেই আপনজনকে কবর দিতেন তারা। প্রাণের ভয়ে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়েও আসতেন না। এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী ছিলেন এলিজাবেথ হ্যানকক। মহামারি চলাকালীন ইয়ামের বাসিন্দা এলিজাবেথ মাত্র ৮ দিনের মধ্যে তার ৬ সন্তান এবং স্বামীকে হারান। এলিজাবেথ একাই জীবিত ছিলেন তার পরিবারে। সেই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে তিনি একা হাতে তার স্বামী এবং সন্তানদের কবর দিয়েছিলেন।   

প্লেগের সংক্রমণ রুখতে প্রায় দেড় বছর কোয়ারেন্টিনে ছিল ইয়াম গ্রাম। পরে তারা সাধারণ জীবনযাপনে ফিরে আসলেও ওই অন্ধকার সময়ের কথা বর্তমান ইয়াম এখনও মনে রেখেছে। বর্তমানে আমরা এত উন্নত হলেও ৩৫৬ বছর আগে ওই ছোট গ্রাম আমাদের শিখিয়ে গেছে কোয়ারেন্টিনের অর্থ।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি

ছবিঃ পিক্সাবে, উইকিপিডিয়া, ইয়াম মিউজিয়াম (বিবিসি)