গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

মিশর নিয়ে বহু গবেষণা বহুবার হয়েছে। মিশরের মমি থেকেও আমরা জানতে পেরেছি অনেক নাম না জানা ফ্যারাওদের কথা, রানীদের অস্তিত্ব। কিন্তু সব থেকে অবাক কান্ড মিশরের একটি জায়গায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন পাখির মমি। গবেষকরা এ রহস্যের সমাধানে সচেষ্ট হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ পাখির মমি কোথা থেকে এল, সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষকদের সামনে এসেছে অনেক অজানা তথ্য।

মিশরের মানুষ নাকি এসব পাখিকে পবিত্র বলে মনে করত। তাই তাদেরকে মমি বানিয়ে রাখত। বেশিরভাগ উদ্ধার হয়েছে মানুষের পাশ থেকে। একেবারে ভিন্নভাবে পাওয়া গেছে লক্ষ লক্ষ আইবিস পাখির মমি। আইবিস পাখি দেখতে অনেকটা বাংলার কাস্তে বকের মতোই। এই পাখিকে আফ্রিকার মানুষও পবিত্র বলে মনে করত। টুনা-এল-গ্যাবেলে মাটির নীচে ৪০ লক্ষ আইবিস পাখির মমি পাওয়া গেছিল। এক প্রাচীন কবরস্থান ছিল, যেখানে ১৭ লক্ষ আইবিস পাখির মমি পাওয়া যায়। তবে গবেষকদের দাবি, জ্ঞানের দেবতা থথ-কে খ্রিষ্টপূর্বে ৪৫০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব  ২৫০ অব্দের মধ্যে এই পাখিগুলি উৎসর্গ করা হয়েছিল।   

থথের শরীরটা মানুষের মতো হলেও মুখটা ছিল আইবিসের মতো। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্যালি ওয়াসিফাই এই নিয়ে গবেষণা করে, একটি প্রকাশ করেছিলেন। গবেষণা পত্রে তিনি বলেছিলেন যে, “মানুষের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলে তারা থথের কাছে পাখি উৎসর্গ করত। কিন্তু তাদের সংখ্যা দেখলে সত্যিই অবাক লাগে।” 

গবেষকরা ১৪টি আইবিসের ডিএনএ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ২৬টি পাখির ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেছিলেন যে, অনেকাংশেই এই পাখিদের সঙ্গে সাদৃশ্য ছিল আইবিসের। এই গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয় প্লজ ওয়ান নামে একটি জার্নালে। তবে আইবিসের প্রজনন ক্ষমতা ছিল বেশি। আবার এও মনে করা হয়, যেসব জায়গায় জলাভূমি বা হ্রদ ছিল সেখানে পাখিরা দলবেঁধে জল খেতে আসত। টুনা-এল-গ্যাবেলের মন্দিরের কাছে জলা ছিল। সারাক্কায় মন্দিরের কাছেই ছিল লেক অফ দি ফ্যারাও।  

প্রাচীন মিশরের বিশেষজ্ঞ এবং কার্ডিফ  বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল নিকলসন  জানিয়েছিলেন যে, থথকে উৎসর্গ করার জন্য অল্প সংখ্যক পাখি মন্দিরে রাখা হতো। হয়তো তাদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে প্রজনন করানো হতো। তবে এমনটাও হতে পারে যে, বছরের কোনো একসময় পাখির ঝাঁক উড়ে আসত আর তখনই তাঁদের ধরে থথকে উৎসর্গ করা হতো। 

তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ওয়াল

ছবিঃ এমএনএস, ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক