রানু ভট্টাচার্য|
‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’ – বিশ্বকবির এই বানীই আজ বারবার মনে পড়ছে। যে মনুষ্যত্ববোধে সম্পন্ন বলেই আমাদের মানুষ বলা হয়, সেই মনুষ্যত্ববোধই বিসর্জন দিয়েছি আমরা। নইলে রাস্তায় পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে; অথচ আমরা কেউ তাকিয়েও দেখছি না। শুধুমাত্র হাতটুকু বাড়িয়ে দিতে পারিনি বলেই একজন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল একটু একটু করে। ছিঃ! এরপরেও কি আমরা ধিক্কার দেবো না নিজেদের? পারব তো আয়নায় সামনে গিয়ে দাঁড়াতে?
গোটা বিশ্বের ত্রাস এখন করোনা। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসকে আক্রমণ করছে, ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। কখনো কখনো তা প্রবল হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটছে। এই সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেদের বাঁচাতে কিছু নিয়ম মানার কথা বলা হয়েছে। তবে সেই নিয়মের কোথায় হয়নি যে, রোগীকে ছুঁলেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। নেই, এমন নিয়ম কোথাও নেই। বরং সবসময় শুনছি ‘আমাদের রোগের সঙ্গে লড়তে হবে, রোগীর সঙ্গে নয়!’ অথচ আমরা বুঝলাম ঠিক উল্টোটা। কোনো ব্যক্তির মানবিকতাবোধই যদি মরে যায়! তাহলে কি তাকে বেঁচে থাকা বলে?
গত কয়েকদিনের ঘটনা বিস্মিত করে তুলেছে সমগ্র দেশবাসীকে। বনগাঁয় এক স্ত্রী একা তার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়েছেন কিন্তু অসুস্থ স্বামী হসপিটালের সামনেই বসে পড়েছেন। স্ত্রী একা তাঁকে হসপিটালের ভেতরে নিয়ে যেতে পারছেন না। বারবার সাহায্য চাইছেন আশেপাশের মানুষগুলোর থেকে। সবাই দেখছে, কেউ ফোনে কথা বলছে, কেউ উপদেশ দিচ্ছে, আবার কেউ পিপিই কিট পরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে। কেঊ তো ভিডিও ও করছেন। আর অসুস্থ মানুষটি স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে একটু একটু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। না, এটা কোন সিনেমার দৃশ্য নয়, এক চরম বাস্তব। তবে শুধু একটাতেই থেমে থাকেনি এই শহর, ঘটেছে এমন আরও ঘটনা।
এক নিরীহ শিশুর মুখ থেকে অক্সিজেন পাইপ খুলে নিয়েছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক, কারণ শিশুটির বাবা টাকা দিতে পারেনি। উফ! কী জানি করোনা মানুষের আর কত অচেনা রূপ দেখাবে।
সর্বশেষে বলি, করোনা রোগীকে সাহায্য করুন। তাঁদের স্পর্শ করলে করোনা হবে না; বরং বেঁচে যাবে মনুষ্যত্ব, বাঁচবে মানুষ। দয়া করে সাহায্যের হাতটুকু বাড়িয়ে দিন সবাই। এই সাহায্যটুকুর আজ বড্ড প্রয়োজন।
ছবি – পিক্সাবে