শুভজিৎ দে|
বলুন তো কলকাতায় দোতলা ফুটবল মাঠ কোথায় আছে? এই একই প্রশ্ন আমায় করেছিলেন আমার স্যার। তখন বলতে পারিনি, পরে জানলাম জায়গাটির নাম।
স্যার আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন একটি ঢিপির ধারে। ঢিপির বেশ খানিকটা নীচে লাগোয়া মাঝারি আকারের একটা খেলার মাঠ রয়েছে। স্থানীয় ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে, একটা বল উড়ে আসে ঢিপির ওপর, বলটা ফিরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি স্যার হাসছেন, “নীচের মাঠটা দেখলি, এবার পিছন ফিরে দেখ।” তাকিয়ে হতবাক হবার পালা। ঢিপিটা এত বড় ও সুবিস্তৃত খেয়াল করিনি, অল্প গাছপালার আড়ালে আরও একটা খেলার মাঠ রয়েছে। নীচের মাঠটির থেকে এটা আরও অনেক বড়, সবুজ ঘাসের চাঁদোয়া বিছানো। একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ফুটবল খেলা হয়। তাই ফুটবল গ্রাউন্ড হিসেবেও বেশ নামডাক রয়েছে জায়গাটার। জায়গাটি স্তূপাকৃতি হওয়ার ফলে একটি মাঠ থেকে আরেকটি মাঠ প্রায় ১১ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই ধরনের মাঠ কলকাতায় হয়তো দ্বিতীয়টি আর নেই। জায়গাটির নাম ক্লাইভ হাউস।
দমদম, নাগেরবাজারের ৯১ রাষ্ট্রগুরু এভিনিউতে অবস্থিত সুবিখ্যাত ‘ক্লাইভ হাউস’। সেখানেই রয়েছে ঢিপির উপর দুটি মাঠ। এর মধ্যে একটি মাঠ বন্ধ ও অপর একটি মাঠকে আধুনিক করার জন্য কাজ চালাচ্ছে দক্ষিন দমদম পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবজ্যোতি দেবনাথ বাবু। তাঁর কথায়, “এই মাঠের নীচ থেকে একজন পুরুষ ও মহিলার বহু পুরনো কঙ্কাল পেয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া।” সেখানে মাটির তোলা থকে পাওয়া গিয়েছে আধুনিক ও সাবেকি পাতলা ইঁট, ইঁটের টুকরো ও টালি।
কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ( A.S.I.) দমদমের এই ঢিপিতে খননকার্য চলায় ২০০১ সালে। খননে উঠে এসেছে প্রায় ২,২০০ বছরের পরনো মানব সংস্কৃতির। দমদম ঢিপি, দমদমা কোঠি, ক্লাইভ হাউস, সাহেবান বাগিচা ইত্যাদি নামে পরিচিত এই জায়গাটি। কৌতূহলী মানুষদের দূর থেকে চোখে পড়বে ওই উঁচু ঢিপির ওপর ভাঙাচোরা বাড়ি। ছাদ নেই, দোতলায় মাত্র কয়েকটা দেওয়াল, আবার একতলায় বেশিরভাগ দেওয়ালই ভগ্নপ্রায়, কয়েকটি আবার নিশ্চিহ্ন। রাশিকৃত ভাঙাচোড়া জিনিসপত্র পড়ে এখানে সেখানে। ছাদহীন পলেস্তরা খসা সুবিশাল এক ইমারত গুরুত্বপূর্ণ অতীতকে কোনও ক্রমে আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঔপনিবেশিক স্থাপত্য হিসেবে ইতিহাসের প্রমাণ বহন করছে সেই ইমারতের লাগোয়া মাঠ দুটি। বাড়িটি আদতে একটি কোঠাবাড়ি (ক্লাইভ হাউস)। ঐতিহাসিক দমদমা কোঠি বা দমদম হাউস, নিয়ে লেখা-লেখি ও গবেষণা হয়েছে বিস্তর। গবেষক, ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ববিদ, ভ্রমণাথীর্দের চিরকালীন নজর কেড়েছে এই ক্লাইভ হাউস। এর করণ, প্রথমত ‘দমদম’ এই স্থানিক বা আঞ্চলিক নামটির সাথে জড়িত এ দেশে ঔপনিবেশিক শক্তি প্রদর্শনের দৃপ্ত হুঙ্কার। দ্বিতীয়ত, এটর সঙ্গে জড়িয়ে ভারতকে পরাধীন বানানোর ‘ব্লু-প্রিন্ট’-এর রূপকার রবার্ট ক্লাইভের নাম। আরবি শব্দ ‘দমদমাহ’ কথার অর্থ হল চাঁদমারির জন্য তৈরী উঁচুমৃত্তিকার স্তূপ। এই শব্দটি পড়ে দমদমা হয় যার অর্থ গোলাবারুদের স্তূপ। পরে শব্দটি আরও অপভ্রংশ হয়ে ‘দমদম’ শব্দটি এসেছে।
তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বিহারের মুঙ্গের জেলায় ছোট একটা পাহাড়ের (স্তূপের) ওপর ইংরেজদের তৈরী ‘দমদমা হাউস’ নামক একটি বাড়ির কথা জানা যায়। বাড়িটি তৈরী হয়েছিল সম্ভবত সেনাবাহিনীর জন্য। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে Mr. R.C. Sterndale প্রেসিডেন্সি ভলেন্টিয়ার রিজার্ভ বাহিনীর বার্ষিক রিপোর্টে ‘দমদমা হাউসের’ নাম উল্লেখ করেন। তবে দমদমা হাউস নয়, বরং এই বাড়িটির নিজেস্ব পরিচিতি হল ক্লাইভ হাউস নামে।
বাড়িটির উত্তরমুখি প্রবেশ পথে এক সময় দেখা যেত সিংহদরজা, যার উপর একটা অস্পষ্ট ফলক তাতে লেখা “Countey House of Lord Clive from 1757 to 60 and 65 to 1767”। বাড়িটির আদি মালিকানা বা স্থপতির সুনির্দিষ্ট কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ বলেন এটি ছিল ‘ডাচ’ বা ‘ওলন্দাজদের’ একটি তুলার গুদাম। অন্য মতে এটি ওলন্দাজদের তৈরী একটি ছোট একতলা দূর্গ, ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পর যা রবার্ট ক্লাইভের হাতে আসে। ক্লাইভ এটির সংস্কার করিয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
একতলা থেকে এটিকে দু’তলায় রূপান্তর করা হয়, এটিই লর্ড ক্লাইভের ‘বাগানবাড়ি’। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ও ক্লাইভের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী এটির দ্বিতল যুক্ত হয় এই ঔপনিবেশিক স্থাপত্যে। ক্লাইভ হাউস বিষয়ক জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি বই থেকে পুরানো ছবির ভিত্তিতে এই ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের নিদর্শন বোঝা যায়।
কমেন্টস
যেকথা বলতে বা জানাতে পারলেন না!
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মাঠেই বলতে পারেন শৈশবের অধিকাংশ সময় এই মাঠেই, নাম “উঁচু মাঠ”।
ক্লাইভ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম প্রান্তের মাটির নীচের তল দিয়ে রয়েছে সুরঙ্গ পথ। এখন তা নেই বল্লেই চলে। ইংরেজ আমলে এই সুরঙ্গের পথ ছিলো গঙ্গার নীচ দিয়ে।, যুদ্ধকালীন সময়ে দিল্লির সাথে জোগাজোগ হত এই সুরঙ্গ দিয়ে।
বাকি টা আবার পরে
khub valo laglo pore , very nice and exclusive information , waiting for further again