গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।
বিস্ব উষ্ণায়নের চোখ রাঙানির জেরে গলতে শুরু করেছে বড় বড় হিমবাহ। যার ফলস্বরূপ বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে শোষণ করছে মানুষ। লাগাতার ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন, খনিজ পদার্থ উত্তোলন এমনকী বড় বড় কংক্রিটের জঙ্গলের চাপে বসে যাচ্ছে মাটি। যার ফলে একটু একটু করে জলের তলায় নিমজ্জিত হতে চলেছে এইসব শহর। দেখে নিন কোনগুলি-
১) জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া- দ্রুত জলের তলায় চলে যাওয়া শহরগুলির মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা অন্যতম। এখানে প্রতি বছর ২৪.৪ সেন্টিমিটার (প্রায় ১০ ইঞ্চি) হারে জলস্তর বাড়তে এখানে। ভূগর্ভস্থ জল পাওয়ার জন্য বেআইনিভাবে কূপ খনন করে চলছে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের কাজ। পাশাপাশি রয়েছে অন্যান্য অসুবিধাও। জাকার্তার প্রায় ৯৭ শতাংশই এলাকাই কংক্রিটের জঙ্গলে মোড়া। ভলে ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা বৃষ্টির জল পূরণ করতে পারে না। উঁচু উঁচু ইমারতের ওজনের কারণে ও শহরটি একটু একটু করে জলের তলায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে।তাছাড়া আবাসন বাড়ানোর কারণে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জঙ্গলও কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে। বলা বাহুল্য এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যই কিন্তু এই বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে।
২) ব্যাংকক, থাইল্যান্ড- জলাশয় ভরা জমিতে গড়ে উঠছে গগনচুম্বী সব অট্টালিকা। আর সেই কারণে একইভাবে জলেরব তলায় নিমজ্জিত হওয়ার পথে এগোচ্ছে ব্যাংকক। ২০১৫ সালে ব্যাংকক সরকারের তরফে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, আদামী ১৫ বছরের মধ্যে জলের তলায় নিমজ্জিত হতে চলেছে গোটা শহর। তবে ভূগর্ভস্থ জল আইন ১৯৭৭ অনুসারে, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সমুদ্রের জলস্তর যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে তার তুলনায় এইসমস্ত পদক্ষেপ খুবই নগন্য।
৩) লাগোস, নাইজেরিয়া- উপকূলবর্তী অঞ্চলে একাধিক দ্বীপপূঞ্জের সম্মিলিত রূপ হল লাগোস। খুব খারাপ নিকাশি ব্যবস্থার কারণে ২০১১ সালে বিধ্বংসী বন্যার কবলে পড়েছিসল এই দেশ। যার ফলে সমুদ্রের জলস্তর ২০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৮ ইঞ্চি) মতো বৃদ্ধি পেয়েছে যের ফলে প্রায় ৭৪০,০০০ মানুষ ঘর-ছাড়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে একইভাবে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলনের ফলেও এই সম্ভাবনা আরও বাড়ছে বলে জানা যায়।
৪) ঢাকা, বাংলাদেশ- প্রতি বছর প্রায় ১.৪ সেন্টিমিটার (০.৫৫ ইঞ্চি) হারে একটু একটু করে জলের তলায় নিমজ্জিত হতে চলেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আন্তর্জাতিক হিসাবের নিরিখে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার দশ গুণ বেশি। ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ উপকূলবর্তী গ্রাম্য এলাকা ছেড়ে পালিশে এসে শহরের বস্তিগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে। ঢাকাতেও ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন একটা মারাত্মক বিপদ ডেকে এনেছে।
৫) ম্যানিলা, ফিলিপিন্স- প্রতি বছর ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলনের কারণে ১০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৪ ইঞ্চি) হারে ডুবে যাচ্ছে ফিলিপিন্সের মানিলা। এখানকার জলবায়ুজনিত কারণেই সমুদ্রের উচ্চতা প্রায় দশগুণ বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার আর একটি সমস্যা হ’ল এখানকার বিস্তৃত ধানের ক্ষেত, যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি পরিমাণে জল শোষণ করে। পাশাপাশি মাছ চাষ করার জন্য অবৈধ পুকুর খননের জন্যও মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে ফলে বন্যার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
৬)সাংহাই, চীন- নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন এবং ক্রমেই বাড়তে থাকা উঁচু উঁচু ইমারতের কারণে শহরের ওজন বাড়ছে, যার ফলে শহরটি একটু একটু করে ডুবে যাওয়ার পথে। নদীতে বাধ দেওয়ার কারণে মাটি তার প্রাকৃতিক পলি হারাচ্ছে, ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জমির উর্বরতা। তবে এই পরিস্থিতি রুখতে আজ থেকে নয় সেই ১৯৯৫ সাল থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে সাংহাই সরকার। সেখানে কূপ খননেরব জন্য প্রয়োজন হয় সরকারি অনুমোদনের। সেইসঙ্গে নদীর জল আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার জন্য চিনে নিমজ্জিত হওয়ার হার ৯ সেন্টিমিটার(আনুমানিক ৩.৫ ইঞ্চি) থেকে কমে গিয়ে ১ সেন্টিমিটারে (প্রায় ০.৪ ইঞ্চি) এসে দাঁড়িয়েছে। একাধিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে সেখানে জমির পরিমাণ অনেকটাই বাড়ানোও হয়েছে।
৭) হিউস্টন, টেক্সাস- বাফেলো বায়োউ নদীর তটবর্তী স্থানে অবস্থানের জন্য হিউস্টন প্রাকৃতিকভাবেই প্রচন্ড বন্যাপ্রবন। তবে তারওপর বড় সমস্যা হল ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করা এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনের কারণে শহরটি একটু একটু করে জলের তলায় নিমজ্জিত হতে শুরু করেছে। রিপোর্ট বলছে, হিউস্টন-গ্যালভেস্টন অঞ্চল ইতিমধ্যেই তিন কিউবিক মিটার (প্রায় ১০৫.৯ ইঞ্চি) নেমে গিয়েছে, এবং প্রতি বছর উত্তর-পশ্চিম ২ ইঞ্চি করে ডুবে যাচ্ছে।