গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
করোনা অতিমারীর কালো বছর প্রায় শেষের মুখে। জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে। কিছুদিন আগেই গেল বড়দিন। তবে সেই রেশ এখনও কাটেনি। এই বড়দিনের খুশি সবাই সকলের মতো করে ভাগ করে নিচ্ছে। তবে সমাজে এমন কিছু মানুষও আছেন যারা সাধারণের চোখে অপাংক্তেয়। কারণ তারা আমাদের সাধারণ দৃষ্টিতে স্বাভাবিক নয়। এদের ভালো রাখার, আনন্দ দেওয়ার কথা কিছু মুষ্টিমেয় মানুষ ছাড়া অন্য কেউ ভাবেন না বললেই চলে।
সম্প্রতি ‘ইচ্ছাশক্তি ফাউন্ডেশন’ তেমনই কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের লড়াইতে সামিল হল কিছুটা সহযোগিতা এবং অনেকটা ভালোবাসা নিয়ে। গত ২৭ ডিসেম্বর তারা উপস্থিত হয়েছিলেন ‘প্রত্যাশা হোম’, ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের নিকট। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই, ওই হোমে বসবাসকারী প্রতিটা মানুষের সঙ্গে বড়দিনের খুশি ভাগ করে নেওয়া।

হোমটিতে ছিলেন মোট ৩৫ জন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ। প্রত্যাশা হোমে মূলত বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরা থাকেন। মহিলাদের সংখাই বেশি, ক্ষুদে থেকে শুরু করে রয়েছেন বৃদ্ধাও। তবে সেখানকার বেশিভাগ সদস্যের বয়সই ৬-১৫ বছর। হোমে অতিথিদের দেখা মাত্রই আশা, মুনিয়া, জাহানারা, বর্ষাদের চোখে-মুখে যেন খুশির ঝিলিক। সব থেকে বড় বিষয় হল হোমের মাদার শম্পাদি, শ্যামলীদিও বিশেষভাবে সক্ষম, কিন্তু তার পরেও অন্য সকলের দেখভালের দ্বায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। তাদের এই অসামান্য জীবনীশক্তি এবং মনের জোরকে কুর্নিশ।

এই বছরটা আমাদের সকলের জন্যই বড় কঠিন কাটছে। বহু মানুষ হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জনকে। বদলেছে সাধারণ জীবন। ভালো নেই কেউই। তবে এই ভালো না থাকার মধ্যেও যারা সমাজের অন্যান্য মানুষদের কথা ভাবছেন, পাশে থাকছেন, নিজেদের খুশি তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন তাদের এই চিন্তাধারা সত্যিই প্রশংসনীয়। ইচ্ছাশক্তি ফাউন্ডেশনের মেম্বারদের কথায় – “আমাদের আয়োজন সামান্যই ছিল, কারণ আমাদের ইচ্ছা থাকলেও সংগতির অভাব। তবুও মনের খুশির তাগিদটাই আসল। সেই ভরসা…”

ওইদিন প্রথমে হোমের সকলের হাতে তুলে দেওয়া হয় কেক এবং বিস্কুটের প্যাকেট। বড়দিনের উপহার স্বরূপ ছিল শীতবস্ত্রের সম্ভার। তারপর ছিল সকলের জন্য মাংস-ভাতের আয়োজন। ওইদিন প্রত্যাশা হোমে কিছু মুহূর্ত কাটাতে পেরে ইচ্ছাশক্তি ফাউন্ডেশনের সকলেই আপ্লুত। তারা বলেছেন – “ওদের কাছে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা আমরা পেয়েছি সেটা সত্যি ভোলার নয়। আবার ফিরে আসব।”
‘ইচ্ছাশক্তি ফাউন্ডেশন’ মেম্বাররা যারা এভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে চলেছেন তারা হলেন – অমিতাভ দাশগুপ্ত, সুব্রত ব্যানার্জী, সাল্লু খান, চৈতালী চ্যাটার্জী, মনিয়ুর রহমান, পিয়লী নস্কর, সুমনা মিদ্যা।