গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।

ইতিহাসের এমন কিছু অন্ধরারাচ্ছন্ন দিক রয়েছে, যার কথা জানলে রীতিমতো শিউড়ে উঠতে হয়। প্রথম বিশ্বের দেশগুলির তালিকায় সবার শীর্ষে অবস্থান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কুমীর ধরার জন্য টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হত কি না আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের! এমনিতে পশু শিকারের সময় মাংসের টোপ ব্যবহারের কথা হয়তো সকলেই জানেন, কিন্তু তাই বলে টাটকা মানুষের মাংসের ব্যবহার সত্যিই অমানবিক। আঠারোশো শতকের এই অন্ধকার দিকটির কথা স্থান পেয়েছিল টাইম ম্যাগাজিনেও। সেখানে এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতে এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়েছিল।

ইতিহাস বলে আফ্রিকা মহাদেশ দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। আমেরিকানরা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের দাস বনিয়ে রেখে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার। বাদ যেত না ছোট ছোট কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরাও। কিন্তু তাদের ওপর যে অত্যাচারটা করা হত, তা ছিল একেবারে ভিন্ন মাত্রার। তাদের ব্যবহার করা হত কুমির ধরার টোপ হিসাবে। কেন করা হত এমন জঘন্য কাজ।

জানা যায়, আঠারোশো শতক নাগাদ কুমির শিকার খুবই লাভজনক ব্যবসা ছিল। কুমিরের চামড়া থেকে ব্যাগ,  বেল্ট,  জুতো-সহ বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করা হত। কিন্তু কুমির শিকার করা ছিল এক অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর এই কুমির শিকার করতে গিয়েই সাদা চামড়ার সাহেবরা পড়তেন বিপদে। প্রায়শই কুমির শিকারে বেরিয়ে পড়তে হত দুর্ঘটনার কবলে। জলে কুমির ধরতে নেমে কারওর হাত কামড়ে ছিঁড়ে নিত কুমির। কারওর আবার প্রাণটাই চলে যেত বেঘোরে।

এই অবস্থা থেকে কুমিরের হাত থেকে বাঁচতে, এবং ব্যবসাও চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সূত্র বলছে, আমেরিকার ফ্লোরিডার পাশাপাশি চিপলিতেও চলত এই জঘন্য কাজ। এরজন্য শুরু হল শিশু চুরির পর্ব। যখনই তাদের মায়েরা কোনও কাজে ব্যস্ত থাকত তখনই তাঁদের শিশুদের চুরি করে নিয়ে আসা হত। অবশ্য শেতাঙ্গদের দাবি ছিল, তারা নাকি শিশুদের মায়েদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে শিশুদের কিনে আনত। তবে এই দাবি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তারও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। কারণ পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যখন এই নিয়ে লেখালেখি হয়েছিল তখন কৃষ্ণাঙ্গ মায়েরাই বলেন যে, তাদের কোনও অর্থ প্রদান করা হত না। বরং তাদের শিশুদের চুরি করে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হত।

কীভাবে চলত কুমির শিকার?-  কোনও কোনও সূত্র বলে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জলে ছেড়ে দেওয়া হত খেলা করার জন্য, আবার কোথাও এমনও বলা হয় যে শিশুদের গলা আর কোমর এমনভাবে দড়ি দিয়ে বাঁধা হত, যাতে তারা যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। তবে আর একটি সূত্র মতে শিশুদের শরীর থেকে চামড়া টেনে ছিঁড়ে ফেলা হত, যাতে রক্তের গন্ধে কুমির আরও বেশি করে আকৃষ্ট হয়। আর দূরে রাইফেল হাতে কড়া নজরে থাকত শিকারী। তাজা রক্তের গন্ধে কুমির যখনই তার শিকারের দিকে হাত বাড়াত তখনই রাইফেল দিয়ে তাদের শ্যুট করা হত। তবে এই কাজে বেশিরভাগ শিশুরই একমাত্র পরিণতি ছিল মৃত্যু। কারণ কুমিরের টোপ হয়ে বেশিরভাগ শিশুই কুমিরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হত। যার ফলে মৃত্যুবরণ করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথও ছিল না। এমনকি অনেকসময়ে শিসুদের কামরে ধরার পর কুমিরদের গুলি করত শিকারিরা।

তবে ফ্লোরিডার চেম্বার্স অব কমার্সের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়, এবং একে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করা হয়। পাশাপাশি ফ্লোরিডার মানুষও একে নিছক গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এইসব ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বেশ কয়েকবার। টাইম ম্যাগাজিনে এই ঘটনার বিবরণ প্রকাশের পাশাপাশি মিশিগানের জিম ক্রো জাদুঘরে রাখা একাধিক ছবি এবং পোস্টকার্ডেও শিশুদের কুমিরের টোপ হিসেবে ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক।