রানু ভট্টাচার্জ|
ভালোভাবে বাঁচতে সবাই চায়। কিন্তু সেই চাওয়া যখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তখনই জন্ম হয় অপরাধপ্রবনতার। আলোচ্য দলটির অবস্থাও ছিল তেমন। সেকালে ঠগিদের কথা আমরা শুনেছি। তারা কীভাবে পথচলতি পথিককে ঘায়েল করে তাদের সর্বস্ব লুট করে নিত। সে কথা সর্বজনবিদিত। এই দলটিও অনেকটাই সেইরকমই, এদের বলা যায় ঠগীর দ্বিতীয় সংস্করণ। তবে এরা শুধু ডাকাতিতেই থেমে থাকত না, করত নৃশংস খুন, ধর্ষণও।
১৯৯৬-২০০১ কর্ণাটকের ত্রাস দান্দুপালায়ার কথাই বলা হচ্ছে এখানে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ কোলার থেকে ব্যাঙ্গালোর, কে জি এফ থেকে মান্ডিয়া, মাইসোর। হসুর থেকে দেনকানিকোট (তামিলনাড়ু), চিত্তর থেকে অনন্তপুরা (অন্ধ্রপ্রদেশ) সমস্ত জায়গায় নিজেদের নৃশংসতার ছাপ রেখেছে ২০-৩০ জনের এই দলটি। শোনা যায় পরের দিকে এদের সদস্য সংখ্যা হয় প্রায় ৮০ জন।
তবে যে কোনো দলই গঠন হয়, একজন নেতাকে কেন্দ্র করে। এদের নেতা ছিল দান্দুপালায়া গ্রামেরই এক পঁচিশ বছরের যুবক, নাম ভেঙ্কটস্বামী। এদেরকে করায়ত্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশকে। খুব কায়দা করে পুলিশ প্রথমেই গ্রেফতার করে গঙ্গাম্মাকে। যিনি আচার-বুড়ি নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নাকি হামান দিস্তে দিয়ে কুলের দানা গুঁড়ো করেন রোজ, কিন্তু তল্লাশিতে জানা গেল হামানদিস্তে তে আসলে গুঁড়ো করা হত লুঠ করা সোনার গহনা, তারপর তা ছড়িয়ে যেত কোলার, মাইশুরু, বেঙ্গার পেট প্রভৃতি স্থানে।
পুলিশ এদের শেষপর্যন্ত গ্রেপ্তার করলেও স্বীকারোক্তি আদায় করতে কালঘাম ছুটে গেছিল তাদের। পুলিশি অত্যাচারেও এঁরা অবিচল। শেষপর্যন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে সামান্য বিরিয়ানি খেতে দিতেই অনায়াসে মুখ খোলে সবাই। তারা স্বীকার করে নেয় যে এই ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়াই তাঁদের মধ্যে ‘DOG EAT DOG’ প্রবণতা সৃষ্টি করে।
শেষপর্যন্ত সকলেই ফাঁসিকাঠে ঝুললেও আমাদের মনে কিন্তু বিস্ময় থেকেই যায়। শুধুমাত্র ভালো খাবার, ভালোভাবে বাঁচার জন্য মানুষ এমন নৃশংসও হতে পারে!
তথ্যসূত্র: ট্র ক্রাইম – তমোঘ্ন নস্কর।
ছবি: সাটারস্টক