গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক
১২৪৫ সালে রাজস্থানের সোম বংশীয় শাসকদের একটি শাখা চলে আসে ওড়িশায়। প্রতিষ্ঠা হয় টুং রাজবংশের। প্রথমে পুরীর রাজার অমাত্য, পরে তিগিরিয়া স্টেটের শাসক হয়ে ওঠে ওই বংশ। কলিঙ্গ থেকে ওড়িশায় পরিবর্তিত হওয়ার পরে টিকে থাকা ২৬টি স্টেটের মধ্যে একটি ছিল তিগিরিয়া।
সেই বংশেই ১৯২১ সালে জন্মেছিলেন ব্রজরাজ ক্ষত্রিয় বীরবর চমুপতি সিং মহাপাত্র। তিগিরিয়ার শেষ রাজা।
তাঁর সেবার জন্য অপেক্ষা করতেন ৩০ জন নফর। ছিল ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি। কিন্তু সবার জীবন তো সমান গতিতে বয় না। তেমনই হয়েছিল ব্রজরাজের ক্ষেত্রেও। শোনপুরের রাজকন্যা রসমঞ্জরীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। হয়েছিল ছয় সন্তান। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানেরা ধীরে ধীরে নিজেদের ব্রজরাজের থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন। ভেঙে যায় বিয়ে। রসমঞ্জরী যোগ দেন রাজনীতিতে। হয়ে যান বিধায়ক। ব্রজরাজের জীবনে আস্তে আস্তে নেমে আসে অন্ধকার।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তাঁর দিন চলত সরকারি ভাতায়। চরম অর্থকষ্টে ১৯৬০ সালে তার প্রাসাদ বিক্রি দেন তিনি। তারপরেই স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে সরকারি ভাতাও বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ১৩টি বাঘ ও ২৮টি লেপার্ড মারা এই রাজাকে অপেক্ষা করতে হতো তাঁর প্রজাদের সাহায্যের উপর।
দীর্ঘদিন রোগভোগের পরে ২০১৫ সালের নভেম্বরে মারা যান ব্রজরাজ। একদা যার দিন কেটেছিল রাজমহলের স্বর্গসুখে, তারই শেষ জীবন কাটে অ্যাসবেস্টর দেওয়া মাটির ঘরে। কিন্তু রাজকীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয় তার শেষকৃত্য। উপস্থিত ছিলেন পুত্রেরাও। জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরকুমার সিং মহাপাত্রের প্রথা মেনে রাজ অভিষেকও হয়। রাজার মুকুট হয়তো সবার জন্য নয়। তাই পাননি ব্রজরাজও, শূূন্য হাতেই পঞ্চভূূতে বিলীন হয়ে যান তিনি।
ছবি ঋণ: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, এসএইচএম