গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের কাছে হাডারফিল্ডে বাস ফার্নসওয়ার্থ পরিবারের। গৃহকর্তা রিড ও তার স্ত্রী নিকি। তাদেরই দ্বিতীয় সন্তান অলিভিয়া। বর্তমানে তার বয়স ১১। কিন্তু এই একরত্তিই বিশ্বের তাবড় বৈজ্ঞানিকদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এখন, হয়ে উঠেছে অদ্বিতীয়া।
ছোট বয়স থেকেই কিছু বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী সে। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো খিদে পায় না তার, ঘুমও আসে না চোখে। রিড ও নিক তাকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বলেন, সব বাবা-মারই একই সমস্যা। চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। অলিভিয়ার বয়স বেড়েছে, কিন্তু ঠিক হয়নি কিছুই। আবার ডাক্তারের কাছে যান তার বাবা-মা। সন্দেহ বশত কিছু পরীক্ষা করতে দেন ডাক্তার। পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায়, এক জটিল গঠনগত রোগের শিকার অলিভিয়া। সমস্যাটি হল ‘ক্রোমোজোম ৬পি ডিলিটেশন’।

কী এই ‘ক্রোমোজোম ৬পি ডিলিটেশন’? সাধারণত শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ভ্রুণের কোষগুলো বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে। ফলে গর্ভস্থ সন্তানের দেহে কোষের সংখ্যা দ্রুত ও ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কিন্তু অলিভিয়া যখন মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠছিল, তার কোষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বাড়লেও বিভাজনের ত্রুটির জন্য অলিভিয়ার দেহের কোষগুলোতে ৬পি ক্রোমোজোম উপাদানটি ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই ভূমিষ্ঠ হলেও কোষের ত্রুটি স্থায়ীভাবেই থেকে গিয়েছিল অলিভিয়ার দেহে। অলিভিয়ার দেহ থেকে ৬পি ক্রোমোজোম মুছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খিদে ও ঘুম পাওয়ার অনুভুতিও তার জীবন থেকে মুছে গিয়েছিল।
এরপর ২০১৬তে এক বড় দুর্ঘটনার শিকার হয় অলিভিয়া। একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায় অন্তত ১০০ ফুট। পথচারীরা ভেবেই নেন আর বাঁচবে না এই শিশু। কিন্তু সবাইকে অবাক করে নিজে থেকেই উঠে দাঁড়ায় অলিভিয়া। তার মুখে চোখে ভয়ের লেশমাত্র ছিল না। কেটে যাওয়া অংশ সেলাই করতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে, সেখানেও তার প্রত্যয় দেখে অবাক হন ডাক্তাররা। তারা জানতেন খিদে বা ঘুম পায় না অলিভিয়ার, কিন্তু এখন তো দেখছেন আঘাতও লাগে না তার।
এই দুর্ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডাক্তারদের সঙ্গে অলিভিয়ার ডাক্তারদের ফোন, ই-মেইল চলে এবং পৃথিবীব্যাপী সার্ভে রিপোর্টের আদানপ্রদান শুরু হয়। কিছুদিন পরে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অলিভিয়াকে পৃথিবীর প্রথম ‘বায়োনিক চাইল্ড ঘোষণা করেছিলেন। যার অর্থ, অলিভিয়া অস্বাভাবিক সহ্যক্ষমতাযুক্ত একটি শরীর ও মন নিয়ে জন্মেছে। এই পৃথিবীতে অলিভিয়ার মতো সহ্যশক্তি কারও নেই, সে অদ্বিতীয়া।
তথ্য সূত্র: এক্সপ্রেস. কো.ইউকে
ছবি ঋণ: দ্য ইয়র্কশায়ার পোস্ট