শুভজিৎ দে|
‘হাসি হল ঔষধ, যেটা দুঃখ থেকে মুক্তি দেয়’ বা ‘শেষে সব কিছুই ঠাট্টা’ এমন কথা কজনে বলার সাহস দেখায়, নির্বাক থেকে কেবল অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মানুষকে বসিয়ে রাখার অমন ক্ষমতা সে সময় অন্য কারোর ছিল না, সেই কাজটি নিরলস ভাবে করে আমাদের ঋণী করে গিয়েছেন চ্যাপলিন।
চার্লি চ্যাপলিন, ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা, সুরকার এবং পরিচালক। হলিউড সিনেমার শুরুর সময় থেকে মধ্যকাল পর্যন্ত তিনি তার অভিনয় ও পরিচালনা দিয়ে সাফল্যের শিখরে আরোহণ করেন। চ্যাপলিনকে চলচ্চিত্রের পর্দায় শ্রেষ্ঠতম মূকাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতাদের একজন বলেও বিবেচনা করা হয়। চলচ্চিত্র শিল্প জগতে চ্যাপলিনের প্রভাব অনস্বীকার্য। শৈশব থেকে ১৯৭৭ সালে মৃত্যুর এক বছর আগে পর্যন্ত তাঁর কর্মজীবনের ব্যাপ্তি প্রায় ৭৫ বছর।
চ্যাপলিনের সম্পূর্ণ নাম হল স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডন শহরে জন্মগ্রহণ করেন এই বিশ্বসেরা চলচ্চিত্রকার এবং অভিনেতা।
জানা যায়, চার্লি তার মা হান্না চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটনের অন্তর্গত। চ্যাপলিন তখন খুবই ছোট যখন তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। তাই প্রচণ্ড দারিদ্র এবং কষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর শৈশব কেটেছে। তখন ৯ বছর বয়সও হয়নি, চ্যাপলিনকে দু’বার একটি কর্মশালায় কাজের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তাঁর যখন ১৪ বছর বয়স তখন তাঁর মায়ের মানসিক সমস্যা দেখা দিলে পাগলাগারদে পাঠান হয়। সুতরাং বোঝাই যায় কতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তিনি বড় হয়ছন।
শৈশব থেকেই শিশুশিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রঙ্গশালায় তাঁর যাওয়া-আসা ছিল। পরে তিনি একজন মঞ্চাভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি স্বনামধন্য ফ্রেড কার্নো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সেখানেই তিনি হলিউড চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯১৪ সালে বিখ্যাত কিস্টোন স্টুডিওজের হয়ে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন। তাঁর মা-বাবা দু’জনেই মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই এ পেশাতে আসা তার কাছে সহজ ছিল।
চ্যাপলিন সেই সময়ের জনপ্রিয় লোকদল ‘জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’-এর সদস্য হিসেবে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশ ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসেবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময়- তা সবাইকে জানিয়ে দেন। ১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘের সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এ সিনেমাটি প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট। এ সিনেমাতে চার্লি অভিনয় করেন খামখেয়ালি উচ্ছৃংখল প্রকৃতির যুবকের চরিত্রে।
১৯১৪ সালে তার নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে মানুষকে হাসানোর মতো দুরূহ কাজটি শুধু অঙ্গভঙ্গি দিয়ে যিনি করতেন অত্যন্ত সফলভাবে। সাদাসিধে ভবঘুরে একটা মানুষ, যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো হ্যাট এবং হাতে একটা লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে মানুষটির অদ্ভুত গোঁফ। তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন আর ঘটাচ্ছেন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা। আর এসব দেখেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
১৯১৪-১৯৬৭ পর্যন্ত ৮১টি ছোটবড় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। শেষ ছবি মার্লন ব্রান্ডো আর সোফিয়া লরেন অভিনীত ‘এ কাউন্টেন ফ্রম হংকং’। যেখানে চ্যাপলিন জাহাজের স্টুয়াটের ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। শেষ জীবনের কয়েক বছর কেটেছে অসুস্থতায়। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭৭ চ্যাপলিন ঘুমের মধ্যেই চিরতরে বিদায় নেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাকে ফ্রান্স সরকার ১৯৭১ সালে লেজিওঁ দনরের কমান্ডার ও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯৭৫ সালে নাইটহুডে ভূষিত করেন। মৃত্যুর পরও চ্যাপলিন তার নির্মিত দ্য গোল্ড রাশ, সিটি লাইট্স, লাইম লাইট, দ্য কিড, মডার্ন টাইমস ও দ্য গ্রেট ডিক্টেটর-এর মতো বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে তিনি আজও অমর হয়ে আছেন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
কমেন্টস
respect him , is a moralistic story to learn for people