গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

পৌষ মাসে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হওয়া একটি উৎসব হল পৌষ পার্বণ বা পৌষ সংক্রান্তি। অনেকেই আবার পৌষ সংক্রান্তিকে মকর সংক্রান্তি বলে থাকেন। পৌষ মাসে পালিত হয় বলে নাম পৌষ সংক্রান্তি।

কথায় আছে বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। এই পার্বণ বা উৎসবগুলির প্রত্যেকটিতেই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রীতি-রেওয়াজ। আর সংক্রান্তি মানেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে উৎসবের আয়োজন করা। তবে জানেন কি এই সংকান্তিকে মকর সংক্রান্তি কেন বলা হয়? না জানা থাকলে বলি, বাংলায় যে ১২টি মাস রয়েছে তার এক একটি মাস যেদিন পূর্ণ হয় অর্থাৎ প্রতিটি বাংলা মাসের শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলা হয়। সংক্রান্তির আক্ষরিক অর্থ হল গমন বা সঞ্চার করা। জ্যোতিঃশাস্ত্র মতে বাংলার ১২টি মাসের ন্যায় ১২টি রাশি রয়েছে। আর সংক্রান্তির সময় সূর্য এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে সঞ্চার হয়। ঠিক তেমনি পৌষ সংক্রান্তির দিন সূর্য ধনুরাশি ছেড়ে মকর রাশিতে সঞ্চার হয় বলে একে মকর সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে।

বাংলার মকর সংক্রান্তি, দক্ষিণ ভারতে পোঙ্গাল ও পাঞ্জাবে লহরী নামে পরিচিত। নাম ভিন্ন হলেও উৎসবের উদ্দেশ্য একটাই। তবে শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পালন হয় সংক্রান্তি। বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে নাম ও দিন বদলে বিভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপিত হয় দিনটি। যেমন, থাইল্যান্ডে সংক্রান নামে, মায়ানমারে থিং ইয়ান, নেপালে মাঘি, কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান, ইন্দোনেশিয়ায় পলমৌ এবং লাওসে পি মা লাও নামে সংক্রান্তি পালন হয়।

এই দিনটির গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারতেও। অর্থাৎ ভৌগোলিক ও সামাজিক গুরুত্ব থাকার পাশাপাশি দিনটির ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বও রয়েছে। ধর্মীয় গুরুত্ব থাকার জন্য এই দিনটি বিভিন্ন স্থানে নানা রকম অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত করা হয়। আগে গ্রামে গ্রামে পৌষ সংক্রান্তির দিন পালা গান ও কীর্তন আয়োজন করা হত।

পৌষ সংক্রান্তি প্রধানত নতুন ফসলের উৎসব হিসাবে পরিচিত। যেহেতু উৎসব তাই নাম ‘পৌষ পার্বণ’। এই সময় বাড়ি বাড়ি খেজুর গুড়, নতুন ধানের চাল, দুধ ও পাটালি সহযোগে নানা মুখরোচক পিঠে তৈরি করা হয়। বিশেষত বাঙালি বাড়িগুলিতে এই দিন নানান ধরণের পিঠে তৈরি করার রেওয়াজ আছে। এছাড়াও চাল ও দুধের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি খাবার যেমন, গুড়ের পায়েস, পাটিসাপটা, দই-চিড়ে ইত্যাদি খাবারের আয়োজন দেখা যায়।

মকর সংক্রান্তির আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ঘুড়ি ওড়ানো। ছোট থেকে বড় সকলেই মেতে ওঠে ঘুড়ি নিয়ে। বিশেষকরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এই দিন ঘুড়ি উড়িয়ে থাকেন। আবার বাংলাদেশের ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব পালিত হয়। এর জন্য প্রস্তুতি চলে বেশ কিছু দিন আগে থেকেই।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামীকাল পৌষ সংক্রান্তি। আর পৌষ পার্বণ হল বাঙালির এক ঐতিহ্য। দীর্ঘকাল ধরে বাংলায় এই উৎসব পালন হয়ে আসছে। তবে সময়ের সাথে সাথে বদলেছে দিন-কাল। শহরের মানুষরা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই পৌষ পার্বণের মূল আকর্ষণ পিঠে বানিয়ে উঠতে পারেন না। সেই সমস্যা দূর করতে এখন শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানগুলিতে এই সময় নানা প্রকারের পিঠে বিক্রি হতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গায় এই সময় পিঠে উৎসব পালন হয়ে থাকে।