গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক |
চার দেওয়ালের মধ্যে এখন বন্দী হয় সময়। রোজকার একঘেয়ে রুটিন দম বন্ধ করে তোলে। শহুরে জীবনের একপেশে গতি হারায় রোমাঞ্চের পরিমাপ। তখন যে কারুরই মনে হয়- জীবনটাই বৃথা! ষোলো আনা আর সম্পূর্ণ হল না! ঠিক এরকম সময় ইচ্ছা একটাই হয়, কিছুদিনের বিরতিপর্বে নিজেকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করা। সহজ কথায় ছুটি নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ানো। নিজের সময় নিজেকে দেওয়া।
আসলে এই আল্ট্রামডার্ন সোসাইটির তথাকথিত কর্পোরেট জীবনটা যতটাই একঘেয়ে ততটাই স্নিগ্ধ ও সুন্দর প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে ভোর দেখা। কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির হাতছানি অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়া। সবুজের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা। সামনে সমুদ্রের জলের সাদা ফেনা, সবুজ পাহাড়ের চূড়া, ভোরের হিমেল হাওয়ার স্পর্শ, সঙ্গে হালকা রোদ গায়ে মেখে নিয়ে ভোরকে নতুনভাবে উপলব্ধি করা যায়। ভোর তো সকলেই রোজ দেখি, কিন্তু উপলব্ধি করি কতটা! নতুন দিনের আস্বাদ পাই কতটা। এই সব প্রশ্নের উত্তর হয়তো একটা জায়গায় গেলে একসাথেই পাওয়া যাবে।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের হ্যাভলক আইল্যান্ড – পরিবারের এক অন্যতম সদস্যের মতোই উঠে আসে তার নাম। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এককথায় অপরূপ, তেমনই রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য্য। ব্রিটিশ জেনারেল হেনরি হ্যাভলকের নামে নামকরণ হয় এর। তবে পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্বরাজ দ্বীপ। ১৯৪৩ সালে প্রথম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করে এই দ্বীপপুঞ্জে ভারতের পতাকা ওড়ান। তাঁকে উৎসর্গ করেই এর বর্তমান নাম স্বরাজ।
গোবিন্দনগর, শ্যামনগর, বিজয়নগর, কৃষ্ণনগর, রাধানগর এই শহরগুলি নিয়ে গড়ে উঠেছে হ্যাভলক। নামগুলো শুনে একটা আন্দাজ করাই যায়, এখানে নিশ্চই বাঙালিদের বাস রয়েছে! সত্যিই তাই, জনসংখ্যা মাত্র ৬,৩৫১ আর তার মধ্যে বেশিরভাগই বাঙালি। কলকাতা থেকে জাহাজ বা উড়োজাহাজ দুই পথেই পৌঁছে যাওয়া যায় পোর্ট ব্লেয়ারে। তবে সি-সিকনেসের সম্ভাবনা থাকলে জানুয়ারি-এপ্রিল এই সময়টাতেই যাওয়া উপযুক্ত। জাহাজে সময় একটু বেশি লাগলেও এই অপশন বেশ সাশ্রয়ী। এমনিতে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পুরো সময়টাতেই ভ্রমণের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া যায় হ্যাভলকে। দশ-এগারো হাজার ন্যূনতম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে রয়েছে গাড়ি যার সাহায্যে শহরটি ঘুরে দেখতে পারেন, অথবা ফেরী সার্ভিসের মাধ্যমে সরাসরি চলে যেতে পারেন হ্যাভলক আইল্যান্ডে।
যোগাযোগের মাধ্যম সেখানে লোকাল বাস যা এক ঘন্টা অন্তর অন্তর পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে অটো, সাইকেল, গাড়ি। পর্যটকদের সুবিধার জন্য ভাড়ায় পাওয়া যায় গাড়ি ও স্কুটি। যা নিয়ে হ্যাভলক বীচ ও রাধানগর বীচ দিব্যি ঘুরে দেখা যায়। আমাদের অতি পরিচিত ব্লু লগুন এর রিয়্যাল ভার্সন পাওয়া যাবে রাধানগর বীচের ডান দিক বরাবর। সমুদ্রের নীল স্বচ্ছ জল যার কোনো পরিসীমা নেই, চোখের সামনে মেলে ধরবে যেন অন্য অচেনা এক পৃথিবীকে। মনে মনে এক গ্লাস ব্লু লাগুন তখন অপ্রস্তুত হতে বাধ্য। এছাড়াও রয়েছে এলিফ্যান্ট বীচ যেখানে পৌঁছতে গেলে ফেরীর সাহায্য নিতে হবে। আর সবচেয়ে অন্যতম আকর্ষণ হল – সানরাইজ অ্যাট কালা পাথর বীচ। হ্যাভলক থেকে ৬১৭কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বীচ। যেহেতু ভোর পাঁচটাতেই এখানে সূর্যোদয় হয়ে যায় তাই উপভোগ করতে গেলে যথাসময়ে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে গন্তব্যে। শান্ত পরিবেশে, জনহীন সমুদ্রতটে দূর কিনারা থেকে দেখা যাবে সূর্যকে। জলের রং ক্রমশ ধূসর থেকে হবে স্পষ্ট নীল। এই স্বর্গীয় সময় উপভোগ করতে করতে একটা কথাই মনে হবে- জীবনের উদ্দেশ্যই রোমাঞ্চ আস্বাদ।
যা ঘটে গেছে তা অতীত, আসন্নকে সুন্দর অভিজ্ঞতায়, রোমাঞ্চে সাজানো নিজেদের পক্ষেই সম্ভব। একপেশে জীবন থেকে ব্রেক নিয়ে নতুন ভোরকে উপলব্ধি করতে, প্রকৃতির মাঝে দারুন সময় নিজেকে উপহার দিতে তাই চলে যেতেই পারেন হ্যাভলকে।