গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।
গুটি গুটি পায়ে শেষ হল আরও একটা বছর, বা বলা চলে অস্তাচলে গেল আরও একটা দশক। এক নতুন সূর্যদয়ের সঙ্গে সূচনা হল আরও এক নতুন দশকের। যতবার একটা বছর শেষ হয়ে গিয়ে নতুন বছরের সূচনা ঘটে তখন এই নববর্ষকে স্বাগত জানাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। দেশ-কাল-সীমানা-সংস্কৃতি ফেরে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আলাদাআলাদা রীতি-রেওয়াজ রয়েছে, যা জানলে রীতিমতো হতবাক হতে হয়।
১) স্পেন- স্পেুনে নববর্ষ উদযাপন করার এক বিশেষ রীতি রয়েছে। নববর্ষের প্রাক্কালে ঠিক মাঝরাতে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ১২টি আঙুর খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। স্পেনবাসীর বিশ্বাস প্রতিটি আঙুর আগত নতুন বছরের প্রতিটি মাসের জন্য সৌভাগ্য বহন করে। আর নববর্ষের রাতে মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার লোকজন নিজেদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে একযোগে এই আঙুর খায়।
২) কলম্বিয়া- কলম্বিয়ার মানুষরা খুবই ভ্রমণ-পিয়াসী। বেড়াতে যাওয়ার জন্য এখানকার মানুষরা সবসময়েই তৈরি। আর সেই কারণেই নতুন বছরে এখানকার মানুষ এক অদ্ভুত রীতি মেনে চলে। নতুন বছরে কলমিয়ানরা যাতে নিত্যনতুন জায়গায় বেড়াতে যেতে পারে, সেইজন্য নববর্ষের রাতে তাঁরা খালি স্যুটকেস নিয়ে নিজেদের ব্লকের চারিপাশে ঘুরে বেড়ায়। তাঁরা মনে করেন এমনটা করলে সারা বছর তাঁরা বেড়াতে যেতে পারবেন।
৩) ডেনমার্ক- ডেনমার্কের মানুষদের নববর্ষকে স্বাগত জানানোর কায়দাটি একেবারেই আলাদা। খারাপ আত্মীয়র হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং নেতিবাচক যা-কিছু তা থেকে দূরে থাকার জন্য আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের বাড়ির দরজার সামনে পুরোনো প্লেট এবং গ্লাস ছুঁড়ে ভাঙা হয়। শুধু তাই নয়, নববর্ষের রাতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন মিলে একটা চেয়ারের ওপর হাতে হাত ধরে দাঁড়ায়। এরপর রাত ১২টা বাজলেই সকলে একসঙ্গে লাফ দেয়, এইভাবে তাঁরা এক লাফে পুরনো বছরকে পিছনে ফেলে রেখে নতুন বছরে পা রাখে।
৪) ফিনল্যান্ড- ফিনল্যান্ডের মানুষদের নববর্ষ উদযাপনের রীতি খুবই অভিনব। এখানকার মানুষরা। একটি বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে গলিত টিন ফেলে দেয়। এবার জলের সংস্পর্শে এসে সেই গলিত টিন যখন শক্ত হয়ে যায়, তখন তা এক বিশেষ আকার ধারণ করে। যদি হার্ট শেপ ধারণ করে তাহলে তা বিবাগের ইঙ্গিত দেয়। জাহাজের আকার নিলে তা দূরদেশে ভ্রমমের ইঙ্গিত দেয়, আবার যদি শূকরের আকার নেয়, তাহলে তা বন্যার ইঙ্গিত দেয়।
৫) পানামা- পানামার মানুষরা নতুন বছরে অশুভ আত্মাকে বিতাড়িত করতে বিখ্যাত টেলিভিশন তারকা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে দেয়। পানামার ঐতিহ্য অনুসারে কুশপুত্তলিকা পুরনো বছরের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।
৬) স্কটল্যান্ড- স্কটল্যান্ডে নববর্ষের প্রাক্কালে ‘বন ফায়ার’-এর আয়োজন করা হয়। এই বনফায়ারের আগুনকে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়, যাতে তা আগামী বছরকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলে।
৭) ফিলিপিন্স- নববর্ষের প্রাক্কালে সারা ফিলিপিন্স জুড়ে বিভিন্ন গোলাকৃতি জিনিস চোখে পড়ে। এই গোলাকার জিনিসগুলি মুদ্রার প্রতীক। নতুন বছর যাতে সকলে সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারেন সেই কারণেই এই আয়োজন। এছাড়াও বহু পরিবার তাদের খাবারের টেবিলে ফলের পাহাড় বানিয়ে রাখে। কেউ কেউ আবার ঠিক মাঝরাতে যেকোনও গোলাকৃতি ফল(আঙুর অন্যতম) খায়। সৌভাগ্যের জন্য অনেকে আবার গোল গোল পোলকা ডট দেওয়া জামাও পরেন।
৮) ব্রাজিল- ব্রাজিল-সহমধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশ যেমন- ইক্যুয়েডর, বলিভিয়া, ভেনজুয়েলাতে নববর্ষের প্রাক্কালে বিশেধ ধরণের অন্তর্বাস পরার একটা রেওয়াজ রয়েছে। যার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় রঙ হল লাল, যা নতুন বছরে প্রেমের ইঙ্গিত বহন করে। আবার হলুদ রঙের অন্তর্বাস অর্থভাগ্য বহন করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
৯) গ্রিস- গ্রিসে পেঁয়াজকে খুব শুভ মানা হয়। বলা হয় এটি পুনর্জন্মের প্রতীক। সেইকারণে বাড়ির সদর দরজায় এইদিনে গ্রিসের মানুষরা একটি পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রাখেন। শুধু তাই নয়, রীতি মেনে গ্রিসের মানুষরা তাঁদের সন্তানদের মাথায় পেঁয়াজ দিয়ে আলতো চাপ দিয়ে আশীর্বাদও করেন।
রীতি-রেওয়াজ যা-ই হোক না কেন সকলের মনে নতুন বছর নিয়ে নতুন আশা থাকে, তাই সকলেই চান তাঁদের মনের আশা যেন পূরণ হয়, আর সেইকারণেই এইসমস্ত রীতি-নীতির ওপর বিশ্বাস রাখেন মানুষ।
তথ্যসূত্র: worldstrides.com