লেখক – রুমা প্রধান |
পৌষ মাস। রাঙা মাটির পথ। পথের দু’পাশে শিশির ভেজা সারি সারি সোনাঝুরি গাছ। তার পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে শান্ত খোয়াই। সাথে বাউলের গান, চারিদিক জমজমাট, চলছে বিকিকিনি।
ডিসেম্বরের এমনই কনকনে ঠাণ্ডার সময় বোলপুর মেতে ওঠে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা নিয়ে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় এই পৌষ মেলায়। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ ৭ পৌষ। আজ থেকেই শুরু শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা।
এবার ১২৬ বছরে পদার্পণ করলো পৌষ মেলা। বর্তমানে শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা বললে এক ডাকে সবাই চেনে। তবে অতীতে এই মেলার পরিচয় ছিল ভুবনডাঙার মেলা হিসাবে। পরবর্তীকালে এই মেলা উঠে আসে পুর্বপল্লির মাঠে।
১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে থেকে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। ১৮৪৩ সালের সেই দিনটিকে স্মরণ করেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৩ দিন ব্যাপী একটি উৎসব ও মেলার আয়োজন করেছিলেন। মেলা বসেছিল ভুবনডাঙায়। ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়।
১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলা বসে। সেই থেকেই এই মেলা পরিচিতি পায় শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা নামে। যদিও এখন এই মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়ে। বসন্ত উৎসবের ন্যায় শান্তিনিকেতনে পালিত হয় পৌষ উৎসব। পৌষ মাসের ১ তারিখ শুরু হয় এই উৎসব। সেই মতো সপ্তমীর দিন অর্থাৎ ৭ পৌষ শুভারম্ভ হয় পৌষ মেলার। অতীতের রীতি মেনে আজও ভোর চারটে নাগাদ বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা ব্রহ্মোপসনার জন্য প্রস্তুত হন। তারপর বৈতালিক গান গাইতে গাইতে মন্দির প্রদক্ষিণ করেন। সন্ধার উপাসনার পরে পোড়ানো হয় আতসবাজি।
পৌষ মেলার সবথেকে বড় আকর্ষণ হল পোড়া মাটির জিনিসপত্র ও হস্তশিল্প। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনের ফলেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একতারা, মাটির পুতুল, কাঁথা স্টিচের পোশাক, চার্মশিল্প সব মিলিয়ে একটা রমরমা চতুর্দিকে। এছাড়াও থাকে বাউল গান, ছৌ নাচ, লোকসঙ্গীত, নাটক ইত্যাদি। সাথে থাকে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের স্টল। পৌষ মেলার মোট স্টল সংখ্যা ১৩০০-র বেশি।
ইতিমধ্যেই ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে পৌষ মেলার টানে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছে শান্তিনিকেতন ও প্রান্তিকে। মেলার দিনগুলো যাতে আরও আনন্দমুখর হয়ে ওঠে, সেই আশায় বুক বাধছেন সকলে।
(তথ্যসূত্রঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ ও উইকিপিডিয়া)
ছবি সৌজন্যেঃ বিক্রম দাস
কমেন্টস
খুব ভালো