গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
চিজের মধ্যেই ছোট ছোট সাদা ম্যাগট কিলবিল করছে, আর সেই জ্যান্ত পোকা সহ চিজ খাচ্ছে মানুষ! না, পচন বা নষ্ট হয়ে যায়নি। এটাই বিশেষত্ব ওই চিজের। যারা চিজ খেতে পছন্দ করেন এই বিশেষ চিজটির সম্বন্ধে জানেন কি? জ্যান্ত ম্যাগট চিজ! ওই পোকাগুলো বেঁচে থাকা অবস্থাতেই খেতে হয় এই চিজ। চিজের ম্যাগট যদি মরে যায় তাহলে সেটা আর খাওয়া হয় না। এই ম্যাগট চিজের পোশাকি নাম হল কাসু মার্জু (Casu Martzu)। ইটালির অন্তর্গত একটি ছোট্ট দ্বীপ সারডিনিয়া। সেখানকার মানুষদের আজও পছন্দের খাবার এই ম্যাগট চিজ!
প্রচলিত আছে ইতালির পেকোরিনো চিজ থেকেই কাসু মার্জুর উদ্ভব হয়েছে। এই উভয় চিজই তৈরি হয় শুধুমাত্র ভেড়ার দুধ থেকে। তবে এক্ষেত্রে ফার্মেন্টেশন একটু ভিন্নভাবে করা হয়। যাকে পচন প্রক্রিয়াও বলাই যায়। ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি করা হয় পেকোরিনো চিজ। এবার ওই পেকোরিনো চিজকে খোলা বা আঢাকা অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। যাতে ওই চিজের উপরে মাছি এসে বসে। অবস্থাতেই রেখে দেওয়া হয়।
আমরা সকলেই জানি যে মাছি খোলা খাবারে ডিম পাড়ে। এক্ষেত্রেও তাই হয়। তবে ইতালির এই বিশেষ ধরণের মাছিকে বলা হয় চিজ ফ্লাই। এরা চিজে মধ্যে ডিম পাড়ে। চিজের ভিতরেই ডিম ফুটে মাছির লার্ভা বেরোয়। ওই লার্ভার শরীর থেকে নির্গত একপ্রকার অ্যাসিড চিজের সমস্ত স্নেহজাতীয় পদার্থকে (ফ্যাট) ভেঙে ফেলতে থাকে। পোকা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই চিজ নরম এবং রসালো হয়ে যায় অর্থাৎ চিজে পচন ধরে।
পোকা ধরা ওই রসালো, নরম চিজকেই কাসু মার্জু বলা হয়। চিজ কাটলেই ভিতরে কিলবিল করতে দেখা যায় সাদা সাদা পোকা। এই চিজ খাওয়ার নিয়ম হল পোকা-সহ খাওয়া। আগে ইটালি এবং অন্যান্য বিদেশি বাজারে এই চিজ বিক্রি হত। তবে বর্তমানে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও কালোবাজারে অনেক দামে বিক্রি হয় এই ম্যাগট চিজ।
এই চিজ একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। কাউকে বিক্রি বা কিনতে দেখলে জরিমানাও করা হয়। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জ্যান্ত পোকাগুলো ঠিকভাবে চিবিয়ে না খেলে এরা পেটে গিয়ে মানুষের শরীরেও বেঁচে থাকে। এমনকি পাকস্থলীয় গাঢ় অ্যাসিডেও এদের কোনওরকম ক্ষতি হয় না। শরীরে প্রবেশ করে এরা মানুষের কোষ খেতে থাকে। ফলে স্বরূপ নানারকম শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই পোকাগুলি ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লাফাতে পারে, তাই খাওয়ার সময় অসতর্ক হলে চোখেও যেতে পারে এই পোকা।
এই চিজ যাতে স্বাস্থ্যকর উপায়ে উৎপাদন করা যেতে পারে তার জন্য ভেড়া খামারের মালিকদের সঙ্গে কাজ করে ইটালির ‘সাসারি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ একদল গবেষক। তারা ২০০৫ সালে কাসু মার্জুর প্রস্তুতির একটি অভিনব উপায়ও আবিষ্কার করেন, কিন্তু তাতে সায় মেলেনি কাসু মার্জু প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে।