গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে হিমবাহে। আন্টর্কটিকায় ভেঙে পড়ছে প্রকাণ্ড বরফের চাঁই! শুধু তাই নয়, চিড় ধরছে জমাট বাঁধা বরফের স্তুপেও। বহুদিন আগে থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানিয়েছিলেন পরিবেশবিদরা। এবার তার ভয়ঙ্কর প্রভাব চাক্ষুষ দেখা গেল।

আন্টার্কটিকার ‘নর্থ রিফ্ট’ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদরা। বিগত কয়েক বছর ধরেই আন্টর্কটিকায় হিমবাহ ভেঙে গলে যাচ্ছে। এই নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বিশ্ব পরিবেশবিদদের। বিশ্বউষ্ণায়নের ফলে মেরুপ্রদেশে বরফ গলছে ফলে সমুদ্রের জলতল বাড়ছে। এই জলবায়ুর বদল সংকেত দিচ্ছে বিপর্যয়েরই। এরই মধ্যে নর্থ রিফ্টের বিশাল বরফের চাঁই ভেঙে পড়েছে।

ব্রিটিশ আন্টার্কটিক সার্ভে (বিএএস) আন্টর্কাটিকায় তাদের গবেষণা চালাচ্ছে। সেখানকার বিজ্ঞানীদের মতে, আন্টর্কটিকার নর্থ রিফ্টে জমে থাকা বরফের চাঁইতে ফাটল ধরেছে। ক্রমশ সেই ফাটল বাড়ছে। মাঝখান বরাবর ধীরে ধীরে দ্বিখণ্ডিত হচ্ছে বিশাল হিমবাহ। বিপদের শেষ এখানেই নয়। গত কয়েকদিন ধরে এই ফাটল আরও বাড়তে দেখা গেছে।

বিএএসের ডিরেক্টর ডেম জেন ফ্রান্সিস-এর মতে, নর্থ রিফ্টের এই ফাটল ক্রমে উত্তর-পূর্ব দিকে বেড়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি মাস থেকে প্রায় প্রতিদিনই ০.৬ মাইল করে উত্তর-পূর্বে বাড়ছে ওই ফাটল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এমন চলতে থাকলে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই নিমেষে ভেঙে পড়বে। এই বরফ গলা জল মিশবে সমুদ্রে। যার প্রভাবও হবে মারাত্মক। সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে ভয়ংকরভাবে।

বিএএসের বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটান শহরের থেকেও বড় আকারের একটা বরফের চাঁই শীঘ্রই ভাঙতে চলেছে। ৪৯২ ফুট (১৫০ মিটার) ঘন জমাট ওই আইস সেলফ পশ্চিমে ১.২ মাইল অবধি বিস্তৃত। অর্থাৎ এই চিড় বাড়তে থাকলে উত্তর থেকে পশ্চিমে বরফের স্তুপও ঝরঝর করে ভেঙে পড়বে। পশ্চিম আন্টর্কটিকার দুটি বিশাল হিমবাহে ইতিমধ্যেই ভাঙন ধরেছে। বিশাল এই দুটি হিমবাহ পুরোপুরি গলতে শুরু করলে সমুদ্রের জলস্তর ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলেও আশংকা বিজ্ঞানীদের।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে উত্তর মেরুর গ্রিনল্যান্ডেও। সেখানেই সবচেয়ে বেশি বরফ মেরুকে ঢেকে রয়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে এই বরফের চাদর গলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলও ধীরে ধীরে গলছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, যদি গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে যায়, তাতে গোটা পৃথিবীতে সমুদ্রের জলস্তর গড়ে ২৩ ফুট বাড়বে!

২০২০ সালে আন্টর্কটিকার তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উষ্ণতম আন্টার্কটিকা দেখা গিয়েছিল। তাপমাত্রার পারদ ছিল ১৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে এমন ঘটেছিল সেই ১৯৬১ সালে। পরবর্তী সময় একটু বদলালেও পুনরায় ২০১৫ সালে উষ্ণতা বাড়ে। পরিবেশবিদরা বলছেন, আন্টর্কটিকায় উষ্ণতম মাস হিসাবে দেখা হয় জানুয়ারিকে। যেভাবে জলবায়ুর বদল হচ্ছে উষ্ণায়ণ বাড়ছে, মেরুপ্রদেশের হিমবাহ (গ্লেসিয়ার) দ্রুতহারে গলে যাচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায় বিপর্যয়ের আর বেশি দেরি নেই। এমনই যদি চলতে থাকে, তাহলে আর মাত্র ৮০ বছরের মধ্যেই মেরুপ্রদেশের এক-তৃতীয়াংশের বরফ সম্পূর্ণভাবে গলে যাবে।

ছবিঃ দ্যা স্টেটসম্যান, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক