গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

এক সময় ক্যালিফোর্নিয়ার কলোরাডো নদী থেকে খাল কেটে স্যালটন সিঙ্কে জল ঢুকিয়ে তৈরি হয়েছিল কৃত্তিম স্যালটন হ্রদ। পরবর্তীকালে কলোরাডো নদী প্লাবিত হয়ে সেই কৃত্তিম হ্রদকে পরিণত করে নদীতে। নাম হয় স্যালটন সি।

বর্তমানে এই স্যালটন নদী বিলুপ্তির মুখে। এক সময় কলোরাডো মরুভূমির প্রাণ হয়ে ওঠা এই নদী আজ মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীদের আতংকের কারণ। ১৯০০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি কলোরাডো নদী থেকে খাল কেটে স্যালটন সিঙ্কে জল আনার কাজ শুরু করে। ১৯০৫ সাল নাগাদ সেই খাল কাটার কাজ সম্পূর্ণ হয়। কলোরাডো নদী হতে জলের স্রোত বইতে থাকে শুষ্ক স্যালটন সিঙ্কে। নদীর জলে সিঙ্ক ভরে উঠতেই তা প্রাণবন্ত হ্রদে পরিণত হয়। যার নাম হয় স্যালটন লেক।

ক্রমে এই অঞ্চলে জন বসতি স্থাপিত হয়। এই নদীর জলকে কাজে লাগিয়েই চাষাবাদ শুরু করে বাসিন্দারা। তবে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যেই নদী এবং হ্রদের সংযোগকারী খালে বিপুল পরিমাণে পলি জমে যায়, তার নব্যতা কমে আসে। এর ফলে কলোরাডো নদীতে বাণ আসে। নদীর জল স্যালটন হ্রদ সহ পার্শ্ববর্তী উপত্যকা ভাসিয়ে দেয়। পরে সেই জল জমেই সৃষ্টি হয় স্যালটন নদী।

এটি বর্ষার জলে পুষ্ট নদী, তাই বছরের অন্যান্য সময় এর জল শুকিয়ে যায়। এই নদিকে কেন্দ্র করেই চাষাবাদ, পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করে। নদীতে দেখা মিলত বিভিন্ন প্রজাতির মাছে, সেই টানে আস্তানা গড়ে ওঠে প্রচুর পরিযায়ী পাখিরও। বন্যপ্রাণীদের দেখা পাওয়া যেত।

জলের শব্দ এবং পাখির কলকলানিতে প্রাণোজ্জ্বল থাকত স্যালটন নদী, কিন্তু আজ সেই জল অতিব বিষাক্ত। মাছের সঙ্গে বিদায় নিয়েছে পাখিরাও। এই নদীর জল এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল যে, শুকিয়ে যাওয়া নদীর বিষাক্ত ধুলো উড়ে দূরদুরান্তের বাতাসও দূষিত করছে। এর কারণ হিসাবে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর বর্ষায় কলোরাডো নদী উপচে জল ঢুকত এই নদীতে। সারা বছরব্যাপী সেই জলই থাকত নদীর বুকে। কিন্তু বন্যা রুখতে কলোরাডো নদীতে বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন। বিপত্তি হয় সেখানেই।

১৯৩৮ সালে কলোরাডো নদীর উপর বাঁধ তৈরির হয়। যা ইম্পিরিয়াল বাঁধ নামে পরিচিত। বন্যা আটকানোর ফলে স্যালটন নদীতে বর্ষার জল ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। জমে থাকা জল বাষ্পে পরিণত হয়ে শুকোতে শুরু করে। তবে যে পরিমাণ জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছিল তার সম পরিমাণ জল নদীতে ঢুকছিল না। ফলে জলের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। ১৯৭০ সাল নাগাদ একদল পরিবেশবিদ নদীর প্রকৃতি বদল ঘটতে চলেছে বলে সতর্কও করেছিলেন। কিন্তু সে বিষয়ে নজর দেয়নি ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন।

সাতের দশকের শেষে নদীর মাছ হঠাৎ করে মারা যেতে শুরু করে। নদীর জল শুকিয়ে শুকিয়ে অত্যন্ত লবণাক্ত হয়ে ওঠে, এর ফলেই জলজপ্রাণী মারা যেতে শুরু করেছিল। জলে প্রাণী মরে পচন ধরে যেতে শুরু করে। সেই থেকে তৈরি হয় বিষাক্ত গ্যাস। যা নদীর জল সহ ওই এলাকার মৃত্তিকা এবং বায়ুমণ্ডলকেও দূষিত করে। ওই বিষাক্ত জলে চাষাবাদও বন্ধ হয়ে যায়। নদীর বুকে ভেসে থাকা পাখির আনাগোনাও কমতে থাকে। স্থানীয় বসতি ক্রমে সরে যায় অন্য স্থানে।

ছবিঃ দ্য অ্যাটল্যান্টিক, ওয়েদার চ্যানেল, সিয়েরা ক্লাব, কেবিপিএস