গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
বর্তমানে বেশিরভাগ মহিলারাই মাইগ্রেনের শিকার। বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন। কিন্তু অনেকেই মাইগ্রেন সম্পর্কে তেমন সচেতন নয়। তাই প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এই মাইগ্রেন আসলে কী? কীভাবে বুঝবেন কোনটি মাইগ্রেনের যন্ত্রণা? এর নিরাময় কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
মাইগ্রেন এক বিশেষ প্রকারের মাথা যন্ত্রণা। এই ব্যথা মাথার যেকোনও একটি পাশ থেকে শুরু হয়, অনেক ক্ষেত্রে পুরো মাথায় যন্ত্রণাও হয়। এই যন্ত্রণার প্রভাবে মাথার স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। আমাদের মাথার বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো রয়েছে, সেগুলো এই ব্যথার শুরুতে সাধারণের তুলনায় স্ফীত হয়ে যায়। এতে মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি বা বমিভাব দেখা যায়। অনেক সময় রোগীর দৃষ্টিবিভ্রমও হতে পারে।
তবে, সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। চোখের সমস্যা, ব্রেন টিউমার, অথবা মাথায় অন্যান্য সমস্যার কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে মাইগ্রেনের নিরাময় সম্ভব।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে মাইগ্রেন পুরুষের চেয়ে নারীদেরই বেশি হয়। এই রোগের নির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই, তবে চকোলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া হলে, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা করা, অনিদ্রা, দীর্ঘক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলার কারণেও এই রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, অতি উজ্জ্বল আলো, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য এই রোগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
কীভাবে বুঝবেন কোনটি মাইগ্রেনের ব্যথা
মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমিভাব এই রোগের অপর একটি লক্ষণ। এক্ষেত্রে মাথার যেকোনও এক পাশ থেকে ব্যথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে ব্যথা। অনেক সময় চোখের পিছন দিকেও ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই সময় শব্দ ও আলোয় অস্বস্থি হয় এবং ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
মাইগ্রেন এড়াতে কী কী খাবেন
- রঙিন শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন – বার্লি, ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত এবং আলু মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
- আদার রস বা জিঞ্চার পাউডার জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারলে উপকার মেলে।
- বিভিন্ন মৌসুমি ফল, খেজুর এবং ডুমুর ব্যথার উপশম করে।
- ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কী কী খাবার এড়িয়ে চলবেন
- গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড কম খাবেন।
- পেঁয়াজ এড়িয়ে চলুন।
- দুধ, দই, চা, কফি, সফট ড্রিংক, চকোলেট, আইসক্রিম, মাখন, টমেটো এবং টক ফল।
- কলা, চিনাবাদাম এবং আপেল।
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মাইগ্রেন থেকে রেহাই পেতে যা করবেন
মাইগ্রেনে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
- অতিরিক্ত বা একেবারে কম আলোতে কাজ না করা।
- তীব্রশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে এড়িয়ে চলা।
- মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে এবং বিশ্রাম করতে হবে।
- প্রতিদিন সঠিক সময়ে পরিমিত ঘুমাতে হবে।
- তীব্র রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করা।
- দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার ও টিভির সামনে না থাকা।
ছবিঃ পিক্সাবে