গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
বর্তমানে গোপন তথ্য বিনিময়ের বহু সহজ পথ রয়েছে। তবে আজ থেকে বহু বছর আগে গোপন তথ্য বিনিময়ের উপায়গুলি ছিল তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। একবার ধরা পড়লেই আর রক্ষে নেই। কখনও পশু-পাখির সাহায্যে, কখনও বা গাছের ছাল বা ডালে লেখা খোদাই করে তার উপর মোমের আবরণ দিয়ে খবর প্রেরণ হত, বিভিন্ন সময়ে শত্রুপক্ষের চোখে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বস্থ চরের মাধ্যমেও খবর বিলি করা হত। আবার সংকেতিক লিপিরও ব্যাপক ব্যবহার ছিল।

ওই প্রাচীন সংকেতিক লিপিই হল এখনকার স্টেগানোগ্রাফি। স্টেগানোগ্রাফি শব্দটি আদতে একটি গ্রিক শব্দ। গ্রিসে স্টেগোস কথার অর্থ আচ্ছাদন এবং গ্রেফিয়া শব্দের অর্থ হল লেখা। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে, এমন লেখা যা পড়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এই ধরনেই সংকেতিক লিপি যার উদ্দেশে পাঠানো হত এবং যিনি পাঠাতেন তাঁরা ছাড়া অন্যকেউ সেই গোপন সংকেত পড়তে পারতেন না। কারণ সেই বার্তার সংকেতের অর্থগুলো শুধুমাত্র ওই দুই ব্যক্তিরই জানা থাকত।

বিভিন্ন ধরণের হত স্টেগানোগ্রাফি। একসময় গ্রিসে এর বিপুল ব্যবহার ছিল। এই নিয়ে বহু কাহিনিও শোনা যায়। গ্রিক রাজারা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিত্রপক্ষের কাছে সাহায্য চাইতে এক স্টেগানোগ্রাফির এক বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতেন। তাঁরা শত্রুপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে সংকেতিক বার্তা প্রেরণ করতেন। তবে এর জন্য কোনও চিঠি বা পত্রের প্রয়োজন ছিল না। শুধু প্রয়োজন দূতের। প্রথমে দূতের মাথার চুল কামিয়ে তাঁদের ন্যাড়া করা হত। এর পর ওই ন্যাড়া মাথায় ট্যাটু বা উল্কির মতো করে সংকেতে গোপন বার্তা লেখার পর বেশ কিছুদিন ধরে অপেক্ষা করা হত। এই অপেক্ষার কারণ মাথায় চুল গজানো, যাতে সংকেতিক বার্তা কারোর নজরে না পড়ে। চুল গজালে সেই দূতকে পাঠানো হত মিত্র রাজাদের কাছে। সেখানে মিত্র রাজারা ওই দূতের চুল পুনরায় কামিয়ে গোপন সংকেত পড়তেন। তারপর নিজেদের মতামত একইভাবে দূতের মাথায় লিখতেন এবং পুনরায় মাথায় চুল গজিয়ে গেলে দূতরা রাজ্যে ফিরে আসত। মাথায় সংকেতিক বার্তা লিখে প্রেরণের ব্যাপক চল ছিল প্রাচীন গ্রিসে। গোপন বার্তা পাঠাতে এই ধরণের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার হত প্রাচীনকালে। স্থান, কাল বিশেষে তার কৌশল ছিল ভিন্ন।

এখন বর্তমানে প্রযুক্তির প্রভাবে বদলেছে সেই সকল কৌশল। বর্তমানে গোপন তথ্য বিনিময়ের জন্য ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে গোপন বার্তাকে লুকিয়ে না রেখে বার্তার অর্থকে গোপন রাখা হয়। যাকে বলা হয় এনক্রিপশন। পাঠক এবং প্রেরক ডি-কোড না করলে এর অর্থ বোঝা অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন কোডিং জানা।
তথ্যসূত্রঃ দ্য ওয়াল
ছবিঃ সিকিওরলিস্ট, প্রিন্টেরেস্ট, গিয়াদা ফিওরিন্ডি