গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।

দেশমাতৃকাকে ভালবাসে না এমন সন্তান এই পৃথিবীতে বিরল। ‘বিজ্ঞানী বেশে বিপ্লবী’ বলতেন যাকে ব্রিটিশ গোয়েন্দারা, যিনি অনায়াসে বলতে পারেন “আমি বিজ্ঞানী গবেষণাগারেই আমার কাজ। কিন্তু এমন সময় আসে যখন বিজ্ঞানীকে সাড়া দিতে হয় দেশের কাজে” আবার তার মুখ থেকেই শোনা যায় “দেশের জন্য প্রয়োজন হলে বিজ্ঞানীকে টেস্টটিউব ছেড়ে গবেষণাগারের বাইরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের গবেষণা অপেক্ষা করতে পারে কিন্তু স্বরাজ্যের জন্য সংগ্রাম অপেক্ষা করতে পারে না।” তিনি হলেন বাংলার প্রথম রসায়নবিদ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়,  তিনি আবার দেশপ্রেমিক ও বটে। 

ছাত্রজীবন থেকেই দেশের প্রতি তাঁর অনুরাগ লক্ষ্য করা যায়। ইংল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৮৮৫ সালে উপাচার্য একটি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। প্রবন্ধের বিষয় ছিল ‘সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে ভারতের অবস্থা।’ তিনি জানতেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে তার বৃত্তি বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা জানার পরও তিনি সেই প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন। পরে সেটি বই আকারে প্রকাশ পেলে সেই বইটির ভূমিকায় প্রফুল্লচন্দ্র স্বাধীনতার স্বপক্ষে আবেদন রাখেন। 

গবেষণার মাধ্যমকে তিনি দেশের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাই তাঁর প্রথম গবেষণার বিষয় ছিল ঘি ও সরষের তেল ভেজাল পরীক্ষা। সঙ্গে বিভিন্ন প্রসাধনী ও ওষুধ এবং এসবের কাঁচামালেও ভেজাল মেশানো হচ্ছে কিনা সে দিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল। তার মোট গবেষণাপত্র ১৪৫ টি। দেশি ভেষজ ব্যবহার করে শিল্প-কারখানার তৈরীর প্রচেষ্টা ও তিনি প্রথম করেন। তার সেই প্রচেষ্টার ফল ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’ কারখানা যা পরবর্তীতে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটাই সম্ভবত প্রথম ওষুধ তৈরির কারখানা।

 বাংলায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছিলেন না,  তিনি ছিলেন দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম। এই রসায়নবিদ,  দেশপ্রেমিক, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে তাঁর ১৫৯তম জন্মদিনে রইলো অসংখ্য প্রণাম। 

তথ্যসূত্রঃ শিক্ষাসভা ওয়েবসাইট

ছবি ঃউইকিপিডিয়া