কল্লোল মুখার্জী
জাতীয় পতাকা হল পবিত্র স্মৃতিচিহ্নের মতো, যা অত্যন্ত সম্মানের এবং একটি দেশের পরিচিতির অন্যতম প্রতীক। আমাদের জাতীয় পতাকা ‘তেরঙ্গার’ ইতিহাস বহু পুরানো ও বিচিত্র। ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের সময় মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর প্রথম ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। যেটি ছিল সবুজ রঙের। তার বামদিকে উপরে ছিল পদ্মফুল ও নীচে ডানদিকে ছিল হাত রুটি।
এরপর ১৯০৫ সালে ভগিনী নিবেদিতা একটি পতাকা ব্যবহার করেন। সেটি ছিল লাল রঙের। তার চারধারে ছিল হলুদ রঙের ১০৮টি শিখা। মাঝে ছিল বজ্র, যার দুপাশে বঙ্গাক্ষরে লেখা ‘বন্দে’ ও ‘মাতরম’। ১৯০৬ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি ‘কলকাতা পতাকা’ নামক পতাকা ব্যবহার করা হয়। এটিই ছিল প্রথম ত্রিরঙা পতাকা। পতাকায় উপর দিক থেকে সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের আড়াআড়ি ভাগ। সবুজের উপর সাদারঙের আটটি পদ্ম, হলুদের উপর দেবনাগরী অক্ষরে নীলরঙে লেখা ‘বন্দেমাতরম্’ এবং লালের উপর সাদারঙে বামদিকে সূর্য ও ডানদিকে অর্ধ চন্দ্র। ১৯০৭ সালে জার্মানির মাটিতে মাদাম ভিকাজী রুস্তম কামা কলকাতা পতাকার মতোই একটি পতাকা উত্তোলন করেন। এতে মাঝের হলুদের উপর নীলের বদলে সাদাতে লেখা ছিল ‘বন্দেমাতরম্’।

এরপর ১৯১৭ সালে বালগঙ্গাধর তিলক এবং শ্রীমতী অ্যানি বেসান্ত স্বাধীনতা-যুদ্ধে নতুন একটি পতাকার কথা ভাবেন।যাতে আড়াআড়ি ভাবে একটি লাল ও একটি সবুজ এইভাবে সমান আকারের পাঁচটি লাল ও চারটি সবুজ ডোরা ছিল। পতাকা জুড়ে ছিল সাতটি তারা, যা সপ্তর্ষিমণ্ডলের প্রতীক এবং পতাকার উপরের বামদিকে ছিল ইউনিয়ন জ্যাক ও ডানদিকে উপরে ছিল একটি তারা ও একটি অর্ধচন্দ্র।
১৯২১ সালে গান্ধীজি তাঁর প্রথম পতাকা তৈরি করেন। এটিতে উপর দিক থেকে যথাক্রমে সাদা, সবুজ ও লাল রঙের সমান আড়াআড়ি ভাগ ও মাঝে চরকা। ১৯৩১-এ জাতীয় কংগ্রেসের তরফে আসে আরও এক নতুন পতাকা। এই পতাকার তিনটি আড়াআড়ি ভাগ ছিল উপর থেকে গেরুয়া, সাদা ও সবুজ রঙের। সাদার মাঝে ছিল ছোট্ট চরকা।
সবশেষে ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন ব্রিটিশ সরকার যখন ঘোষণা করেন যে, আগামী ১৫ই আগস্ট স্বাধীন হবে ভারত, তখন একটি অস্থায়ী কমিটি তৈরি হয় পতাকা তৈরির জন্য। সেইমতো ২২শে জুলাই তৈরি হয় ‘তেরঙ্গা’। এবং ১৫ই আগস্ট স্বাধীন ভারতের আকাশে ওড়ে বর্তমান এই পতাকা।
তথ্য সূত্র: দ্য কালারফুল হিস্ট্রি অফ ফ্লেগস, কে বি সিং
ছবি ঋণ: দ্য কালারফুল হিস্ট্রি অফ ফ্লেগস; কে বি সিং, পিক্সাবে