জারিন তাসনিম রুকু।
আটটা পাচঁটার অফিস না হওয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমার ব্যস্ত থাকা হয়। সকাল থেকে টানা ন’টা-দশটা অবধি অফিসের পর ওই এক ডিনারটাই আমার আর অনিমার একসাথে করা হয়। তারপর আমি নিত্যদিনের অভ্যাসে রিডিং রুমে চলে যাই, আর অনিমা নিত্যদিনের অভ্যাসে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে, অনিকেত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো..আমি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চলে আসি।অনিমা ঘুমিয়ে পড়ে।
টুকটাক লেখার অভ্যাস আমার অনেক আগের। সারাদিন এর ব্যস্ততা শেষ এ লেখতে বসে যাই। এই লেখালেখির গোলকধাঁধায় আমার একমাত্র বউ অনিমাকেই সময় দেওয়া হয় না। একমাত্র বলার একটা কারণ আছে… আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ.. একমাত্র বউ বলার একমাত্র কারন আমার জীবনে সব কিছুই দুটো.. আমার মা দুটো, ভাগ্যক্রমে বাবা ও দুটো, ভাই দুটো, বোন দুটো, শালী দুটো, খালা দুটো চাচা দুটো কিন্তু বউ একটা। সেই জন্য তার দাপটটাও প্রচন্ড রকমের বেশি। কিন্তু এত দাপট থাকা সত্ত্বেও ও কখনো আমাকে নিজ দাপট খাটিয়ে বলে না অনিকেত আজ তুমি আমাকে সময় দেবে। ওর এইটুকু দাপট না খাটানোটা আমার কাছে ঠিক আকাশ ছুঁই ছুঁই মনে হয়। যেখানে আমার অফিস কলিগ, ফ্রেন্ড সার্কেল এর বউদের প্রতিনিয়তের অভিযোগ থাকে তারা তাদের সময় দেয় না, সেখানে আমার বউ আমাকে এই বিষয় নিয়ে ভুলেও কিছু বলে না।
তো যে প্রসঙ্গে বলছিলাম, রাত করে এসে ওই এক ডিনার এর সময়টুকু ওকে দেয়া হয় তারপর আমি ওকে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব এই মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সেই যে রিডিংরুমে ঢুকে পড়ি তারপর বের হওয়ার কথা মনে থাকেনা অনিমা অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ে আমি নামায পড়ার জন্য যখন ওকে ডাকতে যাই তখন প্রায় সদ্য জন্ম নেওয়া সকাল কেমন একটা সন্ধ্যে সন্ধ্যে ভাব চারপাশটাতে হাল্কা বাতাস ওর চুল গুলোকে খানিকটা অগোছালো করে দেয় আর অনিমা অনর্গল ঘুমের মাঝে প্রলাপ বকে যায় আমার শুনতে ভাললাগে। কারন আমি প্রতিদিন ওর প্রলাপ এর প্রধান চরিত্রে থাকি৷
প্রেম করতাম না বলে একসময় ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার কাছে চিরকুমার নামে পরচিত ছিলাম..বলতো,করবি তো অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে করতেই শেষ ভালবাসার সময় পাবি না।
ওদের পাশের মেয়েটাকে দেখিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, এই যে এই মেয়েটাকে দেখছিস ও আমাকে সারাটা রাত ছেড়ে দিয়েও ধরে রাখে আমার লেখালেখির প্রায় অর্ধেকটা সময় জুড়ে ভাবতে লেগে যায় ওর দেওয়া এই বিশাল রকমের স্বাধীনতাটার কথা..ও ওর দেওয়া বিশ্বাস দিয়ে আমাকে ধরে রাখে।
ভোরবেলা অবচেতন মনে ওর আমাকে নিয়ে বলা অনর্গল কথা, নামায শেষে সকাল দেখতে দেখতে ওর বলা, কাল রাতের লেখা গল্পটা শোনাবে না..?
ওর ওই নরম নরম কন্ঠে বলা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো কথাটার আদলে আমি তীব্র অনুরাগ অনুভব করি, ওর এই ছেড়ে দেওয়াটাই আমার কাছে ভালবাসা।
গতেবাধা সংসার সংসার অনুভূতি আসে না মনে হয় এখনো প্রেম করছি প্রতিদিন সকাল দেখতে দেখতে প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ছি..