শুভজিৎ দে|
কলকাতায় বসবাস করতেন এই মহারাজা। প্রায় ২০০ বিঘা জমির উপরে ভূকৈলাশ রাজবাড়ি তৈরী করেছিলেন তিনি। নাম মহারাজা বাহাদুর জয়নারায়ণ ঘোষাল। আজও বিরাজমান সেই রাজবাড়ি। তবে জানেন কি, কে ছিলেন এই রাজা? জানেন কোথায় গেলে দেখতে পাবেন এই রাজবাড়ি? না জনলে জেনে নিন।
এই প্রকাণ্ড এলাকাটির মধ্যে রয়েছে মূলত ৩টি মন্দির এবং ৩০০ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ইটভাটা। জায়গাটি খিদিরপুর ডক সংলগ্ন ট্রামডিপো থেকে হাটা পথে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলির মধ্যে ভূকৈলাশ রাজবাড়ি অন্যতম। তবে বর্তমানে রাজবাড়িটির রাজকীয় বৈভব আর নেই। এখন তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আধুনিকতার ছোয়া লেগে সংরক্ষণের বদলে তাকে পুনরায় বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে সেই স্থানে রাজপরিবারের সদস্য ছাড়াও বহু স্মরণার্থী বসবাস করেন।
সাধক রামপ্রসাদ এই স্থান পরিদর্শন কালে জায়গাটির নাম দিয়েছিলেন “ভূ-কৈলাশ”। আবার দীনবন্ধু মিত্রের সুরধুনী কাব্যেও ভূ-কৈলাশ রাজবাড়ির বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে তিনি বলেছেন, “ভুবনে কৈলাশ-শোভা ভূ-কৈলাশ ধাম, সত্যের আলয় শুভ সত্য সব নাম”।
জয়নারায়ণ ঘোষাল (১৭৫২ – ১৮২১) গোবিন্দপুরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি সংস্কৃত, হিন্দি, বাংলা, আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। জানা যায়, তিনি নবাব মোবারক দৌলতের দ্বারা পাটনা, মুর্শিদাবাদ, ছোটোনাগপুর ও বর্ধমানের প্রাদেশিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
এছাড়াও তিনি দিল্লীর সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের কাছ থেকে রাজকীয় অনুদান পেয়েছিলেন এবং ‘মহারাজা’ ও ‘বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
ওয়ারেন হেস্টিংস জয়নারায়ণ ঘোষালের কাজে খুশী হয়ে দিল্লীর দরবার থেকে তাঁকে তিন হাজারী মানসবদারি পাইয়ে দেন। যার স্মৃতি বহনকারী হিসেবে আজও দুটি কামান এই রাজবাড়িতে দেখতে পাওয়া যায়।
একটি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, তিনি পুলিশ সুপার জন শেক্সপিয়ারের সময়কালে এক জন সুপারইনটেনডেন্ট পদও অলংকরণ করেছিলেন।
আবার রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তিনি বহু সংস্কারমূলক কাজেও জড়িত ছিলেন।
জয়নারায়ণ ঘোষাল তাঁর ২০০ বিঘা জমির মধ্যে “শিবগঙ্গা” নামক একটি পুকুর খনন করেছিলেন। পরে ১৭৮১ সালে এই পুকুরের এক পাশে দুটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে আজও পুজো করা হয় ১১ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন কালো কোষ্টি পাথরের দুটি শিবলিঙ্গ। পরবর্তিকালে ওই দুটি শিবলিঙ্গের নামকরণ করা হয়, “রক্তকমলেশ্বর” ও “কৃষ্ণচন্দ্রেশ্বর”। এটি শুধুমাত্র কলকাতাই নয় সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সবথেকে বড় শিনলিঙ্গ এটি। রক্তকমলেশ্বর শিবের আটচালা মন্দিরের গায়ের এক স্থানে লিপিবদ্ধ আছে – “চৈত্রেঙ্ক পক্ষ গনিতেহনি পূর্ণিমায়াং: শাকেহক্ষি শূণ্য জলধীন্দুমিতে গৃহেহস্মিন। শ্রীযুক্ত রক্তকমলেশ্বর নাথ লিঙ্গং বারে রবে : পশুপতে : কৃপয়াবিরাসীত। শকাব্দ : ১৭০২”। এখনও সেখানে বিশাল ধুমধাম করে পালিত হয় শিবরাত্রি।
তার ঠিক পরের বছর (১৭৮২ সালে) মহারাজা জয়নারায়ণ প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর কুলদেবী ‘মা পতিত পাবনি’র একটি মন্দির। সেই মন্দিরের গর্ভগৃহে ওই দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি আছে। প্রতি বছর এখানে জাঁকজমক ভাবে দুর্গা পুজো হয়। এছাড়াও মূল মন্দিরের চারিদিকে অন্য চারটি মন্দির বিদ্যমান। যেমন – “মাকর বাহিনী গঙ্গা”, “পঞ্চানন দেব”, “জয় কাল ভৈরব”, ও “রাজেশ্বর মহালিঙ্গ” এই ধর্মীয় পরিমণ্ডল এক সম্প্রীতির বাতাবরণ প্রস্তুত করেছে, যার একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে।
কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই রাজবাড়িটিকে ‘হেরিটেজ অব কলকাতা’ বলে ঘোষণা করা হয়।
কমেন্টস
এশিয়া মহাদেশে সর্বোচ্চ শিব লিঙ্গ নাদিয়া জেলার শিব নিবাস মাজদিয়া তেই আছে বলে জানতাম।
ঠিক
Awesome
মাজদিয়া র শিবনিবাস এর শিবলিঙ উচ্চতম বলেই জানতাম । দেখেও এসেছি। কতটা উচ্চ তা অবশ্য কোথাও লেখা নেই। ভবিষ্যতে গেলে জানার চেষ্টা করতে পারি, মেপেও দেখতে পারি।
মাজদিয়া র শিবনিবাস এর শিবলিঙ উচ্চতম বলেই জানতাম । দেখেও এসেছি। কতটা উচ্চ তা অবশ্য কোথাও লেখা নেই। ভবিষ্যতে গেলে জানার চেষ্টা করতে পারি, মেপেও দেখতে পারি।p